লিঙ্গ সমতা ও জলবায়ু পরিবর্তন

লিঙ্গ সমতা ও জলবায়ু পরিবর্তন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

যেসব সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, আর্থিক ব্যবস্থা বা শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, সেসব সমাজ উন্নয়নের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকে। সম্প্রতি ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ জার্নালে প্রকাশিত আই আই এ এস এ (IIASA)-এর একটি গবেষণায় জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মসূচীগুলিতে লিঙ্গ সমতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্যকে উপেক্ষা করলে আমাদের গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে, এমনকি জলবায়ু সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলির ক্ষেত্রেও সঠিক পথ অবলম্বন করা সম্ভব হবে না।
গবেষণাটি জোর দিয়ে বলে যে শিক্ষা, চাকরি এবং আর্থিক পরিষেবামূলক ক্ষেত্রগুলিতে সমান প্রবেশাধিকার কার্যকর করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত পদক্ষেপগুলিতে নারীদের যোগদান আরও কার্যকর ফল দেবে। প্রধান লেখক মারিনা আন্দ্রিয়েভিচ (Marina Andrijevic) উল্লেখ করেছেন যে, মুখ্যধারার গবেষণায় লিঙ্গ সমতা এবং জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মসূচীর মধ্যে সংযোগ অনেকাংশেই উপেক্ষিত হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা, শ্রম শক্তি , এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা একটি ন্যায্য ব্যাবস্থাপনা তৈরিতে সহায়তা করবে।
গবেষণাটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশমনের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেছে। উদাহরণ হিসেবে মারিনা বলেছেন জীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক শিল্পগুলির বেশীরভাগই পুরুষ দ্বারা চালিত, সেখানে নারীদের উপস্থিতি খুব কম। জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মসূচীগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যাবহার কমিয়ে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যাবহার বাড়ানো। নতুনভাবে তৈরি হওয়া পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির শিল্পগুলিতে নতুন কর্মী নিয়োগ করার সময় সহজেই নারীদের যোগদান বাড়ানো যেতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতেও সুপরিকল্পিত পন্থা ও নীতি অবলম্বন করে কর্মশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো যেতে পারে।
গবেষণাটি এই প্রমাণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে যে, যেসব সমাজে প্রাথমিক স্কুলিং থেকে শীর্ষস্থানীয় সরকারি ভূমিকা পর্যন্ত নারীদের জন্য কম সুযোগ রয়েছে, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সংকটের বিরুদ্ধে কম স্থিতিশীল। গবেষণাটি জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায়, সামাজিক অগ্রগতির ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়। গবেষণাটিতে নারীরা যেসব বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন সেগুলিকে সামনে আনা হয়েছে, যেমন মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য ঝুঁকি, খরার সময় অপুষ্টি এবং জল সংগ্রহের সময় রোগের সংক্রমণ। অন্যদিকে, পুরুষরা তাপ জনিত চাপ , বন্যা এবং খরার কারণে অর্থনৈতিক কষ্টে বেশি প্রভাবিত হয়। তাদের মধ্যে বিষাদ রোগ এবং আত্মহত্যার প্রবণ তা বেশি দেখা দেয়। জলবায়ু সংক্রান্ত সমাধানগুলি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষদের মধ্যে এই পার্থক্যজনিত ঝুঁকিগুলি বোঝা অত্যন্ত জরুরী।
জলবায়ু সংকটে কার্যকরভাবে সাড়া দিতে, এমন সব গবেষণায় জোর দেওয়া প্রয়োজন যেখানে, সমাজ কীভাবে বি ব র্তি ত হবে তাও বিবেচনা করা হবে, যেখানে ন্যায্যতা এবং সমান সুযোগের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা হবে।

তথ্যসূত্রঃ https://www.sciencedaily.com/releases/2025/02/250205131248.htm?utm_source=substack&utm_medium=email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × two =