শব্দ-চালিত বিদ্যুৎ: নবদিগন্ত

শব্দ-চালিত বিদ্যুৎ: নবদিগন্ত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গগুলি আদতে অনেকটা ক্ষুদ্র বিস্ফোরণের মতো। এগুলি ভীষণভাবে কার্যকর। এগুলি সাধারণত ধাতু ওয়েল্ড করা থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক শক্তি,জীবাণু হত্যা, কিছু গাড়ির ইঞ্জিনে জ্বালানি জ্বালানো পর্যন্ত সব ধরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলো অনেকটা যেন বন্য ঘোড়ার মতো, এদের খোলা জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। খোলা জায়গায় এগুলি বিশৃঙ্খল শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। কাছাকাছি থাকা ধাতব বস্তুর দিকে যাওয়ার প্রবণতা থাকে এদের । এখন বিজ্ঞানীরা এই স্ফুলিঙ্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় শব্দ-উত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে বাতাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহনের একটি পদ্ধতি তৈরি হয়েছে। এগুলি বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণকে বাধার চারপাশে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও নির্দিষ্ট স্থানে আঘাত করতে, এমনকি অপরিবাহী পদার্থকেও আঘাত করতে সাহায্য করে। এই স্ফুলিঙ্গগুলি বাতাসকে উত্তপ্ত করে। ফলে বাতাস প্রসারিত হয় এবং তার ঘনত্ব কমে। এরপর গরম বাতাস শব্দ-উত্তর তরঙ্গ দ্বারা উচ্চতর শব্দ-তীব্রতার অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। পরবর্তী স্ফুলিঙ্গগুলি হালকা বাতাসের সাথে তার ব্রেকডাউন ভোল্টেজ কম থাকার কারণে তাকে সেখানে অনুসরণ করে। স্ফুলিঙ্গের সঠিক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োগ বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে। আগে স্ফুলিঙ্গগুলি কেবল বিপজ্জনক ইলেক্ট্রোলেজার ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। তার জন্য লেজার এবং বৈদ্যুতিক প্রবাহের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণের প্রয়োজন হত।হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরি সালমি লেজারের পরিবর্তে শব্দ -উত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গর পথ নির্দেশনার জন্য এই নিরাপদ, সস্তা এবং অবিচ্ছিন্ন পদ্ধতিটি তৈরি করেছেন। এই নতুন কৌশলটি চোখ ও ত্বকের জন্য নিরাপদ। যার ফলে ‘ইলেক্ট্রোলেজার’ পদ্ধতির বিপদ এড়ানো যায়। নাভারের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসু ইরিসারি বলেছেন, হাতে নিয়ন্ত্রিত সংবেদী উদ্দীপনা তৈরির জন্য ক্ষীণ স্ফুলিঙ্গ ব্যবহার করার বিষয়ে তিনি আশাবাদী । এর ফলস্বরূপ এই প্রথম একটি স্পর্শহীন ব্রেইল সিস্টেম তৈরি সম্ভব হতে পারে।

এই গবেষণাটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি অফ নাভারে, হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছিল। এটি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত হতে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + 19 =