শামুকের ছানার জন্ম

শামুকের ছানার জন্ম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৪ জানুয়ারী, ২০২৪

স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ছোটো ছোটো ছানার জন্ম দেয় মানুষ সন্তান প্রসব করে কিন্তু শামুক, শামুকরা কী করে? নদীর মোহনায় যে শামুক থাকে তারা সম্প্রতি জীবিত ছানা জন্ম দিয়েছে। তাদের ছানা ডিমের খোলসের মধ্যে আবদ্ধ থাকছে না। পৃথিবীতে সন্তান জন্ম দেওয়ার এ এক নতুন সংস্করণ। এই মায়েরা দিনে একাধিকবার জন্ম দেয়। এবং সম্ভবত মা নয় বরং ছানারা এই কাজে নিজেরাই নিজেদের সহায়তা করে। শামুকের অন্যান্য প্রজাতিদের একটি জেলি গ্রন্থি থাকে যা মায়ের শরীরের বাইরে ডিমের জন্য একটি গঠন তৈরি করে। কিন্তু লিটোরিনা স্যাক্সাটিলিসে, এই গ্রন্থিটি একটি ব্রুড পাউচ বা ডিমের থলি হিসাবে বিবর্তিত হয়েছে। ডিমগুলো সেখানে সুরক্ষিত থাকে এবং ডিম ফুটে না বের হওয়া পর্যন্ত মায়ের শরীরে থাকে। এমন কথাই জানিয়েছেন সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় বাস্তুবিদ কারস্টিন জোহানেসন। তিনি আরও বলেন যে মায়ের এই গ্রন্থিতে বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকশো ভ্রূণ থাকতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্ম দেওয়ার সময়, যদি মা ধাক্কা দিতে শুরু করে, তবে যারা প্রস্তুত নয় তারাও সম্ভবত বেরিয়ে আসবে। তবে তার ধারণা যেটা আশ্চর্যের বিষয় সেটা হল সম্ভবত মায়েরা আদৌ ধাক্কা দেয় না বরং ছোটো ছোটো ছানারা তাদের মায়ের শরীর থেকে নিজেরাই পৃথিবীতে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসে। যখন ডিমের থলিতে ডিম ভরে যায় তখন প্রাপ্তবয়স্ক শামুকের ছানা প্রথমে তার নিজস্ব স্বচ্ছ ডিমের খোলসে পাখির ছানাদের মতো খোঁচা দেয়। তবে তারা কীভাবে মায়ের শরীর থেকে তাদের প্রস্থান খুঁজে বের করে তা অজানা, হয়তো বা বাইরে থেকে আসা তাজা নোনা জলের গন্ধ তারা অনুভব করতে পারে। শামুকদের জন্ম দেওয়ার এই প্রক্রিয়া জোহানেসন এবং অন্য গবেষকদের মুগ্ধ করে কারণ প্রজাতিটি সম্ভবত বিগত ১০০,০০০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে এই ক্ষমতা তৈরি করেছে। এটি সত্যিই একটি বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া। তবুও জীবন্ত জন্ম দেওয়ার এই প্রক্রিয়া কোন নাটকীয় পরিবর্তন নয় বরং কিছু জিনগত পরিবর্তনের কারণে ঘটেছে। বহু সময় ধরে শামুকের জিনের প্রায় ৫০টি অঞ্চলের পরিবর্তন থেকে অল্প অল্প করে এই পার্থক্য তৈরি হয়। গবেষকদের মতে ডিমগুলোকে আরও সুরক্ষা দেওয়াই এই প্রজাতির লক্ষ্য যদিও মায়ের থেকে বেরিয়ে আসা নবজাতকরা খুবই দুর্বল, বালির দানার মতো, মাত্র আধা মিলিমিটার লম্বা। তারা কেবল মায়ের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে এবং প্রায়শই তার খোলের চারপাশে হামাগুড়ি দেয়। মা তার সন্তানদের বেরিয়ে আসতে সাহায্য না করলেও তার নবজাতকদের প্রথম প্রাতঃরাশটুকু সরবরাহ করে: তার খোলস থেকে ছেঁটে ফেলা ডায়াটম এবং ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে।