শিকারীর পেটে গিয়েও নতুন জীবনলাভ

শিকারীর পেটে গিয়েও নতুন জীবনলাভ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ জুলাই, ২০২৪
ব্যাঙ

কথায় আছে, যমে মানুষে টানাটানি। পোকামাকড়ের দুনিয়া, আমাদের থেকে আলাদা। কিন্তু যম সর্বত্রই বিরাজমান। বেশিরভাগ পোকামাকড়েরই যম হল ব্যাঙ। একবার গিলে ফেললে, মৃত্যু অনিবার্য। অন্যদিকে এই জগতেই, একধরনের জলজ গুবরে পোকা আছে (রেজিমবার্টিয়া অ্যাটেনুয়াটা)। বৈজ্ঞানিক ভাষায় নামের কচকচি একটা নির্দিষ্ট ধারা মেনে চলে। কিন্তু পোকাটার নাম রাখা যেতে পারতো অমর কিংবা অক্ষয়। কেনো বলছি একথা? কারণ, এই গুবরে পোকাগুলো, জলজ ব্যাঙের (পেলোফাইল্যাক্স নিগ্রোমাকুলেটাস) পেটের ভিতর গিয়েও, মলদ্বার দিয়ে লাফিয়ে আসতে পারে, জ্যান্ত অবস্থায়।
ব্যপারটা যতটা সহজ শুনতে লাগছে, আসলে এতো সহজ নয়। ব্যাঙের মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত রাস্তা বেশ অন্ধকার ও বিপজ্জনক। খাদ্যনালী, সেখান থেকে পাকস্থলী, তারপর ক্ষুদ্রান্ত্র এবং তারও পরে বৃহদান্ত্রের মধ্য দিয়ে মলদ্বার। গুবরে পোকাগুলোকে এই অন্ধকার, বায়ুবিহীন সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সময় লাগে কমপক্ষে ছ মিনিট। গবেষকদের মতে, ব্যাঙ তার মলদ্বারের পেশিটিকে শক্তভাবে আটকে রাখে। সাধারণত খাবার খাওয়ার পরে তারা তাড়াতাড়ি মলত্যাগ করে না; অন্তত ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু পোকাটি, ‘আপন প্রান বাঁচাতে’, ব্যাঙের মলদ্বারের পেশিতে সুড়সুড়ি দেয়। ফলত ব্যাঙের মলত্যাগের বেগ আসে, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক আগে। প্রায় ৬ ঘণ্টার মাথাতেই। প্রায়শই মলদ্বারের কাছে এসে বসে থাকে। প্রথমেই বেরিয়ে আসে মাথাটা। মলের সঙ্গে আটকে থাকে। তারপরেই তারা নিজেদের মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। বেঁচে থাকে আরও সপ্তাহ দুয়েক।
এই কাজের জন্য, শরীরের কোন অঙ্গ ব্যবহার করে এরা? গবেষকরা সেটাও দেখার চেষ্টা করেন। তারা পোকাদের পায়ে আঠালো মোম দিয়ে আটকে দিয়েও দেখেছেন। তাতে পোকাগুলো অচিরেই প্রাণ হারিয়েছে। সুতরাং বেশ বোঝা যাচ্ছে, গুবরে পোকাগুলো ব্যাঙের পেটে গিয়ে নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকে না। কারেন্ট বায়োলজি জার্নাল অনুযায়ী, গবেষকরা, পরীক্ষাটি এক ডজনেরও বেশি বার করে দেখেছেন। যা দেখা যাচ্ছে তাতে, ৯৩% ক্ষেত্রে, গিলে ফেলা এইসব গুবরে পোকা ঠিক বের হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হলো, এটা কি সব গুবরে পোকার ক্ষেত্রেই হয়? না। অন্যান্য জলজ গুবরে পোকারা কিন্তু এতটা ভাগ্যবান নয়। গবেষকরা আর এক দল জলজ গুবরে পোকা (এনোক্রাস জাপোনিকাস) নিয়েও পরীক্ষা করে দেখেছেন। এরা কিন্তু সকলেই ব্যাঙের পেটের ভিতরেই প্রাণ হারিয়েছে। ব্যাঙের গিলে ফেলার ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় পর আংশিকভাবে মলের সঙ্গে মৃত অবস্থায় বেরিয়েছে। এরা হয়ত সুড়সূড়ি দেবার এই কারুকার্যটা কিংবা দমবন্ধকর, অন্ধকার জায়গায় বেঁচে থাকার লড়াইটা এখনও রপ্ত করে উঠতে পারেনি। তবে এই পরীক্ষা দেখিয়ে দিয়েছে, ‘খাতরো কে খিলাড়ী’র মতন মৃত্যুকে জয় করতে গুবরে পোকাও পিছুপা নয়।