শিম্পাঞ্জিদের যোগাযোগের ভাষা মানুষের মতো

শিম্পাঞ্জিদের যোগাযোগের ভাষা মানুষের মতো

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ জুলাই, ২০২৪
শিম্পাঞ্জি

মানুষের মতো শিম্পাঞ্জিরাও কিন্তু অঙ্গভঙ্গি করে, নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চালায়। মানুষ যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলে, তারা বেশ দ্রুত নির্দিষ্ট সময়ে পালা করে একে অন্যের সাথে কথা বলে। আবার অন্যের কথার মধ্যে বাধা দিয়ে নিজের বক্তব্যও পেশ করে থাকে। গবেষকরা শিম্পাঞ্জির “কথোপকথন” অনুসরণ করে দেখেছেন যে তারা একইরকমভাবে মানুষের মতো দ্রুত কথা বলার প্যাটার্ন অনুসরণ করে অঙ্গভঙ্গি সহকারে নিজেদের মধ্যে টানা কথা বলে। কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে এই ফলাফল রিপোর্ট করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথরিন হোবাইটার মানুষের কথা বলার বৈশিষ্ট্য হিসেবে জানান, আমাদের কথোপকথনগুলো গড়ে মাত্র ২০০ মিলিসেকেন্ডে দ্রুত গতিতে এক জনের থেকে অন্য জনের কাছে মোড় নেয়। গবেষকরা বলেছেন, স্থান, সংস্কৃতি ভেদে মানুষের কথোপকথন সারা বিশ্ব জুড়ে একইরকম। একই কথোপকথন কাঠামো শিম্পাঞ্জিদের মধ্যেও বিদ্যমান কিনা তা জানার জন্য পূর্ব আফ্রিকার পাঁচটি বন্য সম্প্রদায়ের শিম্পাঞ্জির “কথোপকথনের” তথ্য তারা সংগ্রহ করেছেন।
গবেষকরা ২৫২ টা শিম্পাঞ্জির ৮৫০০ অঙ্গভঙ্গির তথ্য সংগ্রহ করেন। কথা বলার ধরন, কথা বলার পালার সময় তারা মাপেন। দুটো শিম্পাঞ্জি যখন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা আদান প্রদান করে তার মধ্যে ১৪% অঙ্গভঙ্গি থাকে। এই তথ্যগুলো মানুষের কথোপকথনের অনুরূপ সময় প্রকাশ করে। গবেষণার প্রথম লেখক গ্যাল বাদিহি বলেছেন, শিম্পাঞ্জির অঙ্গভঙ্গি এবং মানুষের কথোপকথনের সময় একই রকম আর খুব দ্রুত। এর থেকে মনে হয় মানুষ ও শিম্পাঞ্জির বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া অনুরূপ, যা তাদের সামাজিক, যোগাযোগমূলক মিথস্ক্রিয়াকে চালিত করছে। শিম্পাঞ্জিদের অঙ্গভঙ্গি আর তার প্রতিক্রিয়ায় অঙ্গভঙ্গির মধ্যে প্রায় ১২০ মিলিসেকেন্ডের একটা সংক্ষিপ্ত বিরতি থাকে। মানুষের মধ্যে কোনো কোনো সংস্কৃতিতে কথা দ্রুত বলা হয়, কোথাও বা ধীরে বলা হয়। সেরকম শিম্পঞ্জিদের ক্ষেত্রেও দ্রুততার সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। উগাণ্ডার সংসো গোষ্ঠীর শিম্পাঞ্জিরা ধীরে কথা বলে।
গবেষকরা বলছেন, মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিরা যখন নিজেদের মধ্যে মুখোমুখি কথা বলে বা অঙ্গভঙ্গি করে যোগাযোগ করতে থাকে, তা যোগাযোগের অন্তর্নিহিত নিয়মগুলোকে নির্দেশ করে। এর থেকে তাদের সাধারণ পূর্বপুরুষের যোগসূত্র বোঝা যায়। গবেষকদের মতে হয়তো শিম্পাঞ্জি এবং মানুষ তাদের সমন্বিত মিথস্ক্রিয়া বাড়িয়ে যোগাযোগের অবকাশ তৈরি করার একই কৌশল গ্রহণ করেছে। গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট ‘একে অন্যের সাথে যোগাযোগ’ শুধুমাত্র মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্য নয়। গবেষকরা বলেন অন্যান্য সামাজিক প্রজাতির ঘনিষ্ঠ-পরিসরে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য ভাষার প্রয়োজন নেই। মানুষের কথোপকথনের বিবর্তনীয় ইতিহাস অন্যান্য প্রজাতির যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে অনুরূপ হতে পারে। তাদের বক্তব্য নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ মানুষেরই অনন্য বৈশিষ্ট্য নয় তা সামাজিক প্রাণীদের মধ্যেই বিদ্যমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × five =