
শিল্পকলাকে অনেক সময় সৃজনশীলতার বহিপ্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। অনেকাংশে এটিকে আলংকারিকও মনে হতে পারে। তবে একটি গবেষণা বলছে চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য বা আলোকচিত্র ব্যক্তির বিকাশে এবং জীবনের অর্থবোধ গঠনে বিশেষ সহায়ক হয়। দৃশ্য শিল্পর সাথে নিষ্ক্রিয় সম্পৃক্ততা, ব্যক্তির মধ্যে শক্তিশালী অনুভূতি জাগাতে সাহায্য করে। মানসিক উন্নতি বা সুস্থতার উপর শিল্প পর্যবেক্ষণের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করছেন,গবেষণাদলটি। এ বিষয়ে তারা একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা করেছেন। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডন্ডার্স ইনস্টিটিউটের ম্যাকেঞ্জি ট্রুপ ,ট্রিনিটি কলেজ, ডাবলিন এবং বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগীরা মিলে এই গবেষণাটি পরিচালিত করছেন।
ট্রুপ মন্তব্য করেন, “মানুষ চিত্রশিল্পকে প্রায় বিলাসিতা হিসেবে দেখেন। কিন্তু আমাদের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, যে কোনো শিল্প দেখা, অর্থপূর্ণ সুস্থতার সহায়ক”। তবে ইতিবাচক প্রভাবগুলি তখনই দেখা যায় যখন কোনো মানুষ খুঁটিয়ে রং, বিশদ বিবরণ এবং চিত্রকল্পগুলি লক্ষ্য করেন। এক্ষেত্রে শিল্পকর্মের ব্যাখ্যা নয়, পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট! প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, চিত্রকলা দেখার ফলে কিভাবে আবেগগত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় গভীরতা যোগ করতে পারে এটি। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কিছু ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে চিন্তা করার জন্য উৎসাহিত বোধ করছেন বলে জানান। কোনো মানুষের ব্যক্তিত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিল্পকর্ম তাকে আত্মসচেতনতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সামাজিক দিকগুলিও একটি অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্যালারিতে হোক বা অনলাইন গ্রুপে অন্যদের সাথে শিল্প পর্যবেক্ষণ করা, নিজেদের অনুভূতি সম্পর্কে কথোপকথন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এই কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে সূক্ষ্ম বন্ধনের মুহূর্ত তৈরি হয়। কোনো শক্তিশালী চিত্রর মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি মুখোমুখি হলে, তারা নিজেদেরকে আরও উন্মুক্তভাবে মেলে ধরতে পারেন। ফলে পারস্পরিক বন্ধন আরো শক্তিশালী হয়- ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি হ্রাস পেতে থাকে। ফলাফলগুলির পার্থক্যের ব্যবধান কমাতে রিসেপটিভ আর্ট অ্যাক্টিভিটি রিসার্চ রিপোর্টিং নির্দেশিকা তৈরি করা হয়, যা RAARR নামে পরিচিত। শিল্পকর্মের সাথে মানুষ কিভাবে মিথস্ক্রিয়া করে তার বিশদ তথ্য নথিভুক্ত করা হয় এই নির্দেশিকা অনুসারে। মানসিক স্বাস্থ্যের উপর, শিল্প তৈরির উপকারিতা নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা করা হলেও শিল্প দেখার প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা এবং তার মূল্যায়ন খুবই কম। প্রকাশ্য স্থানগুলি যেমন সংগ্রহশালা, গ্যালারিতে নান্দনিক শিল্প প্রদর্শন হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় শিল্পকলাকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছেন ট্রিনিটি কলেজ ডাব্লিং এর অধ্যাপক ক্লেয়ার হাওলিন। “শিল্পকলাকে জনস্বাস্থ্যের সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার।” মানসিক স্বস্তিলাভের এটি একটি সহজ উপায় হতে পারে। ক্রমবর্ধমান সদর্থক প্রমাণ হাসপাতাল, বয়স্ক কেন্দ্র এবং সামাজিক সেন্টারগুলিকে শিল্প সংগ্রহ স্থাপন বা পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করে। চিত্রকলার তুলির টান কিংবা ভাস্কর্যের কাঠামো ব্যক্তির চারপাশের জগতকে তারা কিভাবে দেখেন, তা পুনর্মূল্যায়ন করার সুযোগ করে দেয়। তারা জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও নিজেদের দের ধারণাকে সমৃদ্ধ করতে পারেন। এই গবেষণার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল বহু সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে স্থানীয় কিংবা সাংস্কৃতিক স্থানগুলিতে শিল্পকর্মের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারেন। মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের জন্যও এটি একটি উপকরণ হিসেবে কাজ করতে পারে। শিল্পকর্মের একটি অংশ আত্মস্থ করে তাকে অর্থপূর্ণ প্রতিফলনে উৎসাহিত করে। সেই কারণে এগুলি থেরাপির অংশ হতে পারে। এই গবেষণা থেকে দেখা যায়, শিল্প কেবলমাত্র সাজসজ্জা বা পছন্দের অঙ্গ নয়, এটি দৈনন্দিন জীবনের অংশ হতে পারে। মানসিক ভারসাম্য গঠন করতে পারে এবং ব্যক্তি-পরিচয়ের অনুভূতিকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।