
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ আফ্রিকা একটি বহুভাষিক দেশ। সেখানে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনায়াসে একাধিক ভাষা বলতে পারেন।বিশ্বের সব মহাদেশের মধ্যে আফ্রিকাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভাষা প্রচলিত। ভাষাবিজ্ঞানীদের ধারণা আফ্রিকাতে কমপক্ষে ২১৪০টি স্বতন্ত্র ও জীবন্ত ভাষা আছে। পটসডামের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নাটালি বোল-আভেতিসিয়ান ও পল ও. ওমানের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় দেখা গেছে বহুভাষিকতার শিকড় শৈশবেই গড়ে ওঠে।ঘানায় বেশিরভাগ শিশু দুই থেকে ছয়টি ভাষা শোনে এবং সেগুলো বুঝতে শেখে। কিছু ভাষা তারা পরিবারের অভিভাবকদের কাছ থেকে সরাসরি শেখে, আবার কিছু ভাষা পরোক্ষভাবে টিভি, রেডিও বা অন্যদের কথোপকথনের মাধ্যমে শুনে শুনে শেখে।এই গবেষণাটির ফলাফল ‘কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট ” জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।এই গবেষণায় ঘানার রাজধানী আক্রার ৩ থেকে ১২ মাস বয়সী ১২১টি শিশুকে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, শিশুরা নানা ভাষার সংস্পর্শে এসেছে ।শিশুরা সাধারণত নিয়মিতভাবে দুই থেকে ছয়টি ভাষা শুনতে পায়। শিশুদের যত্নকারীর সংখ্যাও দুই থেকে ছয়ের মধ্যে। অর্থাৎ যত বেশি সংখ্যক মানুষ শিশুযত্নর কাজ করেন, তারা তত বেশি ভাষা শোনে।ঘানায় পরিবারগুলো সাধারণত একসঙ্গে বড় বাড়িতে থাকে বসবাস করে । যেখানে সবাই আঙিনায় একসঙ্গে সময় কাটায়। সেখানে পরিবার, প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা শিশুর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষক পল ও. ওমানে বলেন বেশিরভাগ পশ্চিমা সমাজে সাধারণত মনে করা হয়, শিশুরা একজন অভিভাবকের কাছ থেকে শুধু একটি ভাষা শেখে।কিন্তু ঘানায় শিশুরা ছোটবেলা থেকেই অনেক ভাষা শোনে ও শেখে।শিশুদের ভাষা শেখার উপর বেশিরভাগ গবেষণা পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলিতে হয়েছে, তাই সেগুলোতে বহুভাষিকতাকে সীমিতভাবে দেখা হয়েছে। কিন্তু এই গবেষণাটিতে দেখা গেছে কিছু সমাজে শিশুরা আরও বেশি ভাষা শোনে ও শেখে। ডঃ নাটালি বোল-আভেতিসিয়ানের মতে,গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা মূলত দুই ভাবে ভাষা শেখে—সরাসরি ও পরোক্ষভাবে।ইংরেজি ভাষা তারা টিভি ও আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের মতো পরোক্ষ চ্যানেলের মাধ্যমে শেখে। কিন্তু বেশিরভাগ স্থানীয় ভাষা (যেমন আকান, গা, এওয়ে) পরিবারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থেকে শেখে।ড. নাটালি বোল-আভেতিসিয়ান বলেন, “সরাসরি ভাষা শেখা গুরুত্বপূর্ণ, তবে টিভি ও সরকারি যোগাযোগ মাধ্যমের মতো পরোক্ষ শিক্ষাও শিশুর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে শহরে।গবেষকরা বলেন ভাষা শেখার গবেষণায় আরও প্র শ স্ত দৃষ্টিভঙ্গি দরকার, কারণ ঘানার মতো দেশে ভাষার বৈচিত্র্য অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা শুধু কতগুলো ভাষা শোনে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, উপরন্তু কে তাদের শেখাচ্ছে এবং কীভাবে শেখাচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।গবেষকদের মতে অনেক শিশুর ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকেই একাধিক ভাষা জানাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা শুধু এক বাড়তি সুবিধাই নয়, বরং তাদের পরিচয় ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।