শুঁয়োপোকার বিষে ব্যাকটেরিয়ার টক্সিন

শুঁয়োপোকার বিষে ব্যাকটেরিয়ার টক্সিন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ জুলাই, ২০২৩

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একটা নতুন গবেষণায় দেখা গেছে শুঁয়োপোকা, তার হুলে থাকা বিষ কোনো প্রাচীন ব্যাকটেরিয়ার থেকে পেয়েছে। গবেষণাটি প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে দুটির মধ্যে সম্ভবত হরিজোন্টাল জিন ট্রান্সফার হয়েছে। সাধারণত বাবামায়ের থেকে জিনগত বৈশিষ্ট্য তাদের সন্তানের মধ্যে বাহিত হয় যাকে আমরা ভার্টিকাল জিন ট্রান্সফার বলি, কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন জীবের মধ্যেও জিনগত বৈশিষ্ট্য বাহিত হতে পারে যাকে হরিজোন্টাল জিন ট্রান্সফার বলে। ফ্লানেল মথের ক্ষেত্রে অতীতে বিবর্তনের মাধ্যমে টক্সিনের একটা সিকুয়েন্স ব্যাকটেরিয়া থেকে মথের লার্ভায় প্রবেশ করে। যদিও শুঁয়োপোকার এই বিষ এখনো রহস্যাবৃত, গবেষকরা বলছেন এর আণবিক তথ্য পরবর্তী ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
মেগালোপিজে-পতঙ্গের এই প্রজাতি অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়। এরা বেশ স্থূল, লোমশ এবং বেশিরভাগ সময়ে বাদামী রঙের হয়। সাধারণত এদের উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকায় দেখতে পাওয়া যায়। এই মথকে ফ্লানেল মথ আর এদের লার্ভাকে “পাস ক্যাটারপিলার” বলা হয়। এই বিষধর শুঁয়োপোকাগুলো হল ফ্লানেল মথের লার্ভা। লার্ভাটা আকারে ছোটো হলেও এদের গায়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্ত লোমের আচ্ছাদনের জন্য এদেরকে অনেকটা বিড়ালের মতো দেখতে লাগে। ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ডের আণবিক কীটতত্ত্ববিদ অ্যান্ড্রু ওয়াকারের মতে এই শুঁয়োপোকার বিষ অন্যান্য পোকামাকড়ের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর এর বিষের বৈশিষ্ট্য দেখে বোঝা যায় এই বিষের বিবর্তন অন্যান্য পোকামাকড়ের বিষের থেকে আলাদা। প্রকৃতপক্ষে, এর উত্স সম্পূর্ণরূপে প্রাণীজগতের বাইরে অবস্থিত বলে গবেষকদের মনে হয়েছে। মেগালোপিজে প্রজাতির শুঁয়োপোকার বিষের সাথে ব্যাকটেরিয়াল টক্সিনের এক অদ্ভুত সামঞ্জস্য দেখতে পাওয়া গেছে। এই বিষ কোশের পৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত হয়ে কোশে গর্ত করে দিয়ে একটা ‘ডোনাটের’ মতো আকার তৈরি করে। ওয়াকার এবং তার সহকর্মীদের মতে তাদের গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে শুঁয়োপোকার বিষের প্রধান উপাদান ব্যাকটেরিয়া থেকে হরিজোন্টাল জিন ট্রান্সফারের মাধ্যমে ঘটেছে। আর এই জিন বাহিত হয়েছে ফ্লানেল মথের লার্ভার পূর্বপুরুষদের মধ্যে আজ থেকে প্রায় ৪০ কোটি বছর আগে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে টক্সিনের টার্গেট কোশে গর্ত করার বৈশিষ্ট্য তারা ভবিষ্যতে ক্যান্সার কোশের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বা কোশে কার্যকারী ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন।