শুষ্ক মরুভূমিতেও রঙিন ফুল ফুটেছে

শুষ্ক মরুভূমিতেও রঙিন ফুল ফুটেছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ জুলাই, ২০২৪
মরুভূমিতে-ফুল

বিগত এক দশকে এই প্রথমবার। আটাকামা মরুভূমির এক অংশে এই শীতে ছেয়ে গেছে সাদা ও বেগুনি রঙের ফুলে।
উত্তর চিলিতে বৃষ্টির ফলে এই বিরল পুষ্প বৃষ্টি। এপ্রিলের মাঝামাঝি এখানে প্রায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তার সঙ্গে দোসর ছিল সকালের কুয়াশা। স্থানীয়ভাবে যা “কামানচাকা” নামে পরিচিত। বলা হয় সকালের এই কুয়াশার ফলে ১৫ বছর অবধি সুপ্ত থাকা গাছপালা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এই বছর শুষ্ক মরুভূমি রাঙিয়ে তুলছে যে দুটি প্রজাতি তার মধ্যে প্রথমটি হল হালকা বেগুনি রঙের “পাটা ডি গুয়ানাকো”। বৈজ্ঞানিক নাম সিস্তানথে গ্র্যান্ডিফ্লোরা। আর অপরটি হল সাদা রঙের “সাইজ অফ দি ফিল্ড” বা নোলানা ব্যাকাটা। ৩০০ থেকে ৪০০বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ফুল ফুটেছে বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমিতে। সাধারণত, জুন, জুলাই এবং আগস্টে কমপক্ষে ১৫ মিমি বৃষ্টিপাত হলে বসন্তের সময় মরুভূমিতে ফুল ফোটে। এটি এল নিনোর সাথে সম্পর্কিত – যা চিলিতে গড়ের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়। এর আগে ২০১৫ সালে, মার্চ মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছিল, তার ফলে শীতকালে গাছপালা সক্রিয় হয়ে ওঠে, ঠিক যেমনটি এবার ঘটছে।
কিন্তু এবারও একই ঘটনা ঘটবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) পূর্বাভাস অনুসারে বর্তমানে এনসো-নিরপেক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে। অর্থাৎ এমন একটি সময়কাল যখন না ‘এল নিনো’ না ‘লা নিনা’ ঘটছে। সম্ভবত লা নিনায় রূপান্তরিত হওয়ার আগে এই ধরনের আবহাওয়া আরও এক মাস ধরে থাকবে। এর অর্থ- খরা ফিরে আসবে, আটাকামা মরুভূমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্র পরিবেশ থাকবে না। ফলে গাছপালাও পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠবে না। যদি আগামী সপ্তাহে বৃষ্টিপাত হয়, আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরে মরুভূমিতে ফুল ফুটবে। তবে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে প্রায় ১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই মরুভূমি। অত্যন্ত শুষ্কতার কারণে এই মরুভূমিতে প্রাণের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। তাই আটাকামাকে চিলির অধিবাসীরা ‘ভ্যালি অব ডেথ’ বা মৃত্যুর উপত্যকা বলতেন। বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন আটাকামা মরুভূমির বিরল শীতকালীন ফুল ফোটাও বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে আসে। বৃষ্টির ফলে গাছপালাগুলো যত তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া দেখায় তত দ্রুত পরাগায়নকারীরা পৌঁছায় না। বীজ অঙ্কুরিত হয়, ফুল ফোটে কিন্তু ওই শুষ্ক মরুভূমিতে মৌমাছি, মথ, বিটল বা অন্যান্য পরাগায়নকারী অনুপস্থিত। শুধুমাত্র মাইট এবং কয়েকটি সরীসৃপ, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর সেখানে বাস। তাই বেশিরভাগ বীজ নষ্ট হয়ে যায়।