শৈবাল আর বায়োপ্লাস্টিকে তৈরি মঙ্গল-বসতি

শৈবাল আর বায়োপ্লাস্টিকে তৈরি মঙ্গল-বসতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ জুলাই, ২০২৫

গত কয়েক দশক ধরে মহাকাশ প্রকৌশলীরা ভাবছেন, কীভাবে ইস্পাত, কাচ ও কংক্রিট পাঠিয়ে গ্রহগুলোতে, বিশেষ করে মঙ্গলে, ভবিষ্যতে মানুষের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করা যায়। সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবিন ওয়ার্ডসওয়ার্থের নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, শৈবাল ও বায়োপ্লাস্টিকের সমন্বয়ে নিজে নিজেই বেড়ে ওঠা ঘর বা বসতি তৈরি করা সম্ভব। এই ধারণা অনুসারে, ঘরের দেয়াল হবে বায়োপ্লাস্টিক দিয়ে তৈরি, আর ভিতরে জন্মাবে শৈবাল। সেই শৈবাল থেকেই আবার নতুন বায়োপ্লাস্টিক তৈরি হবে, ফলে তৈরি হবে একটি স্বনির্ভর, স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা।
এই গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু ডুনালিয়েলা টার্টিওলেক্টা নামের সবুজ শৈবাল, যা ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে জলজ কৃষি ও জ্বালানি গবেষণায় ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষকরা প্ল্যান্ট-সুগার থেকে তৈরি বায়োপ্লাস্টিক দিয়ে পলিল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার দিয়ে গম্বুজ আকারের কক্ষ বা গ্রিনহাউস তৈরি করেন। মাত্র এক মিলিমিটার পুরু দেয়াল মঙ্গলের মতো নিম্নচাপের পরিবেশেও জল ধরে রাখতে সক্ষম।
এই ছোট গ্রিনহাউজে কার্বন-ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ বাতাস ও কৃত্রিম সূর্যালোকের মাধ্যমে শৈবালের বৃদ্ধি ঘটানো হয়। দশদিনের মধ্যে দেখা যায়, নিম্নচাপে শৈবাল বৃদ্ধি পায়, যা কিনা পৃথিবীর স্বাভাবিক চাপে হওয়া বৃদ্ধির সমান। এটি প্রমাণ করে, পাতলা বায়ুমণ্ডলেও জীবন সম্ভব।
তবে এক্ষেত্রে একটি বাধা ছিল আলোর ব্যবস্থাপনা। মঙ্গলে প্রচুর দৃশ্যমান আলো থাকলেও সেখানে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, পলিল্যাকটিক অ্যাসিডের মাত্র এক মিলিমিটার পুরুত্বই ক্ষতিকর UV-C রশ্মি পুরোপুরি এবং UV-A ও UV-B রশ্মির বেশিরভাগ অংশ আটকে দেয়, কিন্তু শৈবালের সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় লাল ও নীল আলো প্রবেশের ব্যবস্থা রাখে।
শৈবালের সফল বৃদ্ধি ঘটলে অতিরিক্ত বায়োমাস থেকে আরও বায়োপ্লাস্টিক তৈরি করা সম্ভব হবে, যা নতুন দেয়াল বা পুরনো দেয়ালের ক্ষত মেরামতে কাজে লাগবে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি কক্ষের নীচে এক ফুট গভীর শৈবালের জলাধার থাকলে পর্যাপ্ত বায়োপ্লাস্টিক উৎপাদন সম্ভব। মঙ্গলের কঠিন পরিবেশ যেমন অত্যধিক ঠান্ডা, তেমনই বিষাক্ত ধুলো ও জলীয় বাষ্পের ঘাটতি মোকাবিলায় আরও উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন হবে। গবেষকরা ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরের বাসযোগ্য গম্বুজ তৈরি করার ও বায়ুশূন্য পরিবেশেও সেই ব্যবস্থা কার্যকর করার পরিকল্পনা করছেন।

এই গবেষণা থেকে বোঝা যায়, জীববিজ্ঞানও মহাকাশ অভিযানে অংশীদার হতে পারে। ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহের বসতি গড়ার কাজে শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি স্বনির্ভর, পুনঃব্যবহারযোগ্য বাসস্থান সহায়ক হবে। একইসঙ্গে পৃথিবীতে টেকসই, পরিবেশবান্ধব নির্মাণকাজেও নতুন পথ দেখাবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 9 =