সংরক্ষিত মাথা থেকে বিলুপ্ত বাঘ পুনরুজ্জীবন

সংরক্ষিত মাথা থেকে বিলুপ্ত বাঘ পুনরুজ্জীবন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

থায়ালাসিন বা তাসমানিয়ান বাঘ অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার অরণ্যে একশো বছর আগে ঘুরে বেড়াত। এই অরণ্যের নাম অনুসারে এদের নামকরণ করা হয়েছিল। তাসমানিয়ান বাঘ, অস্ট্রেলিয়ার মার্সুপিয়াল গোষ্ঠীর শীর্ষ শিকারী খাদক। নেকড়ের মতো দেখতে পেছনদিকে ডোরা কাটা এই বাঘের পেটে ক্যঙ্গারুর মতো থলি থাকত বলে এরা মার্সুপিয়াল গোষ্ঠীর অন্তর্গত। পেটের থলির মধ্যে স্ত্রী প্রজাতি তাদের সন্তানদের বড়ো করত। প্রায় এক শতাব্দী আগে এই বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৯৩৬ সালে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আগে অবধি এখানকার বাস্তুতন্ত্রে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এদের শেষ প্রাণী বিউমারিস চিড়িয়াখানায় মারা যায়।
১১০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় একটা বয়ামে আচারের মতো এই প্রাণীর মাথা রাখা ছিল। এখন বিজ্ঞানীরা এই নমুনা থেকে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে এই প্রাণীকে পুনরুজ্জীবিত করার বেশ কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তারা জানিয়েছেন, এই মাংসাশী প্রাণীর জিনোম তারা ৯৯.৯% নির্ভুলতার সাথে পুনর্গঠন করতে পেরেছেন। জিনোম সিকোয়েন্সিং পূরণ করার জন্য মাত্র ৪৫টা ফাঁক রয়েছে। এই বিশাল কাজের পিছনে রয়েছে কলোসাল বায়োসায়েন্সেস নামে টেক্সাস-ভিত্তিক একটা সংস্থা যারা উলি ম্যামথ এবং ডোডো পাখির মতো বিলুপ্ত প্রাণীদের পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চেষ্টা করছে।
আক্ষরিকভাবে একটা আলমারির পিছনে এক জার ইথানলের মধ্যে এই বাঘের একটা মাথা পাওয়া গিয়েছিল। সবেমাত্র সমস্ত চামড়া সরিয়ে মাথাটাকে আলাদা করে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, আর প্রায় ১১০ বছর ধরে সেই জারসহ মাথা সেখানেই থেকে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার জার থেকে উদ্ধার করা তাসমানিয়ান বাঘের মাথায় আরএনএ অণু পাওয়া গিয়েছিল। এই অণু জিনোম পুনর্নির্মাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাথা থেকে নমুনা নিয়ে, প্রাণীর বেশিরভাগ ডিএনএ আরএনএর স্ট্র্যান্ডের সাথে সিকোয়েন্স করা হয়েছে। জিনগত উপাদান ডিএনএ, জীবনের মৌলিক বিল্ডিং ব্লক। জিনোম হল ডিএনএর একটা সম্পূর্ণ সেট যা প্রতিটা জীবের অনন্য বৈশিষ্ট্য। জীবের বিকাশ, বৃদ্ধি এবং কার্যকারিতার রাসায়নিক তথ্য জিনোমে থাকে। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের থাইলাসিন ইন্টিগ্রেটেড জেনেটিক রিস্টোরেশন রিসার্চ বা টাইগর ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পাস্ক বলেন, খুব উচ্চ মানের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং পাওয়া গেছে, যা এই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টার জন্য খুবই সাহায্য করেছে। আর শীঘ্রই এবিষয়ে আরও অগ্রগতি দেখা যাবে বলে তারা জানিয়েছেন।