সঙ্গীত তার সুর, তাল, লয়, শব্দসহ ব্রেন রেকর্ডিং -এ ধরা পড়ছে

সঙ্গীত তার সুর, তাল, লয়, শব্দসহ ব্রেন রেকর্ডিং -এ ধরা পড়ছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ আগষ্ট, ২০২৩

স্নায়বিক বা বিকাশজনিত ব্যাধির জন্য যাদের কথাবার্তা বলতে অসুবিধা হয়, মস্তিষ্কের মেশিন ইন্টারফেস তাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু বর্তমানের ইন্টারফেস ধীর এবং মাথার ত্বকে স্থাপিত ইলেক্ট্রোড থেকে শুধুমাত্র অক্ষর সনাক্ত করতে পারে। তার থেকে যে কথা উত্পন্ন হয় তা রোবোটিক এবং অর্থহীন। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা এখন মস্তিষ্কের রেকর্ডিং থেকে দেখিয়েছেন যে একজন ব্যক্তি নিজে যে গানটি শুনছেন তা তারা পুনর্গঠন করতে পারেন, শুধুমাত্র শব্দ নয়, সংগীতের পুনর্গঠনের সম্ভাবনা থাকে যা অর্থও প্রকাশ করতে পারে।
অ্যালবানি মেডিকেল সেন্টারের স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মৃগীরোগের অস্ত্রোপচার করার সময়ে পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান শল্য চিকিৎসা কক্ষ জুড়ে বাজাতে থাকেন, এর সাথে রোগীদের মস্তিষ্কে স্থাপন করা ইলেক্ট্রোডের কার্যকলাপ রেকর্ড করতে থাকেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, সঙ্গীতের সুরের সাথে মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলির বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ – সুর, তাল, সুর এবং শব্দ – রোগী যা শুনছে তা পুনর্গঠন করতে পারে কিনা তা দেখা। এক দশকেরও বেশি সময় পরে, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, বার্কলে-এর নিউরোসায়েন্টিস্টরা এই ধরনের ২৯ জন রোগীর তথ্যের বিশদ বিশ্লেষণ করে বুঝেছেন রোগীদের মস্তিষ্ক এতে সাড়া দেয়। এই প্রথম গবেষকরা মস্তিষ্কের রেকর্ডিং থেকে একটি স্বীকৃত গান তার সুর লয় তালসহ পুনর্গঠন করেছেন। এই পুনর্গঠন সঙ্গীতের সুর তাল, শব্দাংশ ধরে রাখার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের তরঙ্গ রেকর্ডিং এবং অনুবাদ করার সম্ভাবনা দেখায়। মানুষের মধ্যে, এই সঙ্গীতের উপাদান, যাকে প্রসোডি বলা হয় — তাল, সুর, উচ্চারণ এবং স্বর এমন অর্থ বহন করে যা শব্দ একা প্রকাশ করতে পারে না।
এই ইন্ট্রাক্রানিয়াল ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি (iEEG) রেকর্ডিংগুলি শুধুমাত্র মস্তিষ্কের পৃষ্ঠ থেকে নেওয়া যেতে পারে, শ্রবণ কেন্দ্রের কাছাকাছি গেলে মস্তিষ্কে গানের কথা আর শোনা যায় না। স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতের কারণে যাদের যোগাযোগ করতে সমস্যা হয়, , মস্তিষ্কের পৃষ্ঠে ইলেক্ট্রোড থেকে এই ধরনের রেকর্ডিংগুলি সঙ্গীতের পুনরুত্পাদন করতে সাহায্য করতে পারে যা রোবটের মতো শব্দ পুনর্গঠন না করে আরো বৃহত্তর অর্থ ধরতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করার কৌশলগুলো উন্নতির সাথে সাথে, ভবিষ্যতে মাথার ত্বকে সংযুক্ত সংবেদনশীল ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করে মস্তিষ্ক না খুলেই এই ধরনের রেকর্ডিং করা সম্ভব হতে পারে। বর্তমানে, স্কাল্প ইইজি অক্ষরের স্রোত থেকে একটি পৃথক অক্ষর সনাক্ত করে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করতে পারে, তবে এই পদ্ধতিতে একটি একক অক্ষর সনাক্ত করতে কমপক্ষে 20 সেকেন্ড সময় লাগে। অপারেশন না করে ভবিষ্যতে রোগীদের জন্য আশা করা যায়, মাথার খুলির বাইরে স্থাপন করা ইলেক্ট্রোড থেকে, ভাল সংকেতযুক্ত গুণমান সহ মস্তিষ্কের গভীর অঞ্চল থেকে কার্যকলাপ পড়া যেতে পারে।এই গবেষণা PLOS বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।