সবুজ হাইড্রোজেন

সবুজ হাইড্রোজেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ মার্চ, ২০২৫

বিজ্ঞানের কল্যাণে বর্তমানে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানি বা অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহার না করে হাইড্রোজেন তৈরি করতে পারি।এর জন্য ফটোইলেক্ট্রোকেমিস্ট্রি বা কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষণ নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটা অনেকটা প্রকৃত সালোকসংশ্লেষের মতোই ।কোনো ক্ষতিকারক গ্যাস ছাড়াই সূর্যালোক ও জল ব্যবহার করে ইলেক্ট্রোলাইসিসের মাধ্যমে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা হয়। ট্রেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক এই প্রযুক্তির ওপর গবেষণা করছেন যাতে পরিবেশবান্ধবভাবে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা যায়।এই গবেষণাটি কার্বন নামক বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।গবেষণার সবচেয়ে নতুন দিকটি হলো -ফটো ক্যাটালিস্ট পদ্ধতি অর্থাৎ সূর্যের আলো শোষণ করে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো । এজন্য গবেষকরা গ্রাফিটিক কার্বন নাইট্রাইড (g-C₃N₄) নামে হালকা ও টেকসই এক বিশেষ উপাদান ব্যবহার করেছেন ।এই উপাদান সূর্যালোক ব্যবহার করে জলের অণুগুলোর রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে হাইড্রোজেন তৈরি করতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে, যদি এই উপাদানটি খুব পাতলা একটি পরমাণুর স্তরে রাখা হয়, তাহলে এটি আগের মোটা উপাদানের চেয়ে অনেক ভালো কাজ করে।পাতলা উপাদান বেশি কার্যকর, কারণ এটিতে হাইড্রোজেন দ্রুত ও ভালোভাবে তৈরি হতে পারে।
এই আবিষ্কার সবুজ হাইড্রোজেন তৈরির সহজ ও উন্নত উপায় তৈরি করতে পারে। বর্তমানে বেশির ভাগ হাইড্রোজেন তৈরি হয় “স্টিম রিফর্মিং” পদ্ধতিতে, যেখানে মিথেনকে উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করা হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব নয়।ট্রেন্টোর গবেষকরা নতুন উপায় বের করছেন, যেখানে সূর্যের আলো ব্যবহার করে (ফটোইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সেল) পরিষ্কার হাইড্রোজেন তৈরি করা যাবে। এই পদ্ধতিতে কোনো দূষণ ছাড়াই শুধুমাত্র অণু ভেঙে হাইড্রোজেন তৈরি করা হয়। গ্রাফিটিক কার্বন নাইট্রাইড একটি বিশেষ উপাদান, যা আলোক অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।এটি সূর্যের আলো শোষণ করে জলের সংস্পর্শে এলে তাকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।এর ফলে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়, যা হাইড্রোজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। গবেষকরা একটি পরমাণুর স্তর দিয়ে তৈরি কার্বন নাইট্রাইড নিয়ে পরীক্ষা করেছেন।সূর্যের আলো যখন এতে পড়ে, তখন এক ধরনের কণা (এক্সাইটন) তৈরি হয়। এই কণাগুলো খুব ধীরগতিতে চলে, কিন্তু পরমাণুর কম্পনের কারণে এগুলো সঠিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে। এই বিষয়টি বুঝতে পারার ফলে, হাইড্রোজেন উৎপাদনের নতুন উপায় খোঁজা সহজ হবে। গবেষকরা এই ফলাফল দেখে অবাক হয়েছেন, কারণ সাধারণত ইলেকট্রন পরমাণুর তুলনায় ২০০০ গুণ ছোট এবং অনেক দ্রুত চলে। ঠিক যেন একটা পোকামাকড়ের ঝাঁক (ইলেকট্রন) কোনো মানুষের (পরমাণু) চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।কিন্তু কার্বন নাইট্রাইডে এই স্বাভাবিক নিয়ম মানা হয় না। এখানে ইলেকট্রন ও পরমাণু একসঙ্গে ধীরে ধীরে চলে। এইভাবে তারা একসঙ্গে হাইড্রোজেন আয়নের কাছে পৌঁছায়।বিজ্ঞানীরা এখন খুঁজে বের করতে চাইছেন, কেন এমনটা হয় এবং এর পেছনের রহস্য কী! গবেষকরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা পাঁচ হাজারের বেশি উপাদান পরীক্ষা করে দেখবেন, কোনটি হাইড্রোজেন তৈরির জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে। তারা আরও ভালো অনুঘটক খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবেন ।এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আরও ভালো উপাদান খুঁজে বের করা সম্ভব, যা পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন তৈরির কাজকে দ্রুত এগিয়ে দেবে। এই প্রকল্প উন্নত শক্তির পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 16 =