জীববিজ্ঞানী অ্যানি লিন্ডসে ‘পাওডারমিল অভয়ারণ্যে’ গত বছর সেপ্টেম্বরে দেখেছেন এমন এক পাখি, যার দেহে স্ত্রী ও পুং দুই লিঙ্গই দুই সমান অর্ধে বর্তমান।
বিস্ময়কর এ পাখির নাম ‘গোলাপীবক্ষ গ্রসবেক'(বিজ্ঞানসম্মত নাম – ফেকটিকাস লুডোভিসিয়ানাস)। গোলাপীবক্ষ নামটা হয়েছে আসলে লোমশ বুকের রঙ গোলাপী বলেই। এই পাখির উভয় ডানার ওপরের দিকের পালক কালচে রঙের এবং ডান দিকের ডানার নিচের পালক লালাভ। আর বাঁ দিকের ডানার নিচের পালক হলদের ওপর খয়েরির ছাঁট। এই ডানদিক আসলে পুং লিঙ্গ পরিচায়ক, এবং বাঁদিক স্ত্রী লিঙ্গ। সাধারণত বসন্তে এ পাখির পালক গজায়, তখন পালকের রঙ উজ্জ্বল হয়ে ফোটে। ফলে পুং ও স্ত্রী লিঙ্গার্ধ আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।
দেহের দুদিকে দুই সমান ভাগে পুরুষ ও নারী বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এ জাতীয় জীবেদের বলা হয় গ্যানান্ড্রোমর্ফ(সাংবাদিকের প্রস্তাবিত বাংলা প্রতিশব্দ- সমঅর্ধ উভলিঙ্গ)। তবে সাধারণত আমরা ‘হিজড়া’ বলে যে বিশিষ্ট-লিঙ্গবিশিষ্ট মানুষদের চিনি তার থেকে গ্যানান্ড্রোমর্ফ আলাদা। হিজড়ার শরীরে উভলিঙ্গের বৈশিষ্ট্য থাকে বটে, কিন্তু গ্যানান্ড্রোমর্ফের মতো দেহের সমান দুই অর্ধে দু ধরনের লিঙ্গবৈশিষ্ট্য থাকে না।
তবে এই পাখিটি যে প্রথম এ জাতীয় জীব তা নয়। পাখিদের অনেক প্রজাতির মধ্যে এমনকি পোকামাকড়, কাঁকড়া, বড় চিংড়ির মধ্যেও এ জাতীয় জীবের দেখা মেলে। তবে খুবই দুর্লভ এ জাতীয় জীব। যেমন অ্যানি যে পাখিটি দেখেছেন, পাওডারমিলের ‘আভিয়ার গবেষণা কেন্দ্র’ গত ৬৪ বছরে মাত্র ১০টি ওই রকম পাখির নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছে। অ্যানির দেখা পাখিটির থেকে চারটি পালক সংগ্রহ করা হয়েছে মূলত DNA পরীক্ষার জন্যে। এছাড়া গবেষণার জন্যে অ্যানি এবং তার দল পাখিটির কিছু ছবি তুলেছেন ও টিকটক ভিডিও করেছেন।
কিন্তু কেমন করে জন্ম হল অ্যানির দেখা পাখিটির?
এই পাখিটির ক্ষেত্রে ডিমাবস্থায় শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়। নিষিক্ত হবার পরে ডিমের মধ্যে দুই লিঙ্গই প্রকট হয়ে ওঠে। ডিমের একাংশে পুং লিঙ্গ অন্যভাগে স্ত্রী লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।
উভয়লিঙ্গ দেহের দুই অর্ধে সমান প্রকট হলেও উভয় লিঙ্গোচিত আচরণ যে এ জাতীয় জীবেরা করে সে কথা বলা যাবে না। জীববিজ্ঞানী আর্থার আর্নল্ড যেমন লক্ষ্য করেছেন এ ধরণের এক উভলিঙ্গ বিশিষ্ট গায়কপাখি পুরুষ কণ্ঠে গান গেয়ে মেয়ে পাখিদের আকৃষ্ট করছে। বস্তুত বিজ্ঞানীরা এখনও জানেনই না ‘গোলাপীবক্ষ গ্রসবেক’ পাখিটির আচরণে কোন লিঙ্গবৈশিষ্ট্য প্রকট।