সমকক্ষ হয়েও, গবেষণা পত্র প্রকাশে পিছিয়ে মহিলারা

সমকক্ষ হয়েও, গবেষণা পত্র প্রকাশে পিছিয়ে মহিলারা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫

যে কোন সমাজে, মানসিকতা পরিবর্তন, এক রাতের ঘটনা নয়। তাই ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির তথ্যবিজ্ঞানী ক্যাসিডি সুগিমোতো বলেছেন, ” বিজ্ঞানের দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে, ‘সাম্য’ ধীরে ধীরে এবং ধাপে ধাপে আসে এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বাস্তবে এটা আদপেই ঘটছে না”।

পরিসংখ্যান বলছে, অ্যাকাডেমিক গবেষণার ক্ষেত্রেই রয়েছে চরম লিঙ্গ বৈষম্য। সমান সুযোগ পেয়ে মহিলারা গবেষণার কাজ শুরু করলেও, ভবিষ্যতে সেই কাজে তাদের প্রতিনিধিত্বের সমান সম্ভাবনা বজায় থাকবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বহু মহিলাই মাঝপথে অ্যাকাডেমিক্স থেকে সরে যাচ্ছেন। গত কুড়ি বছরে গবেষণা চালাতে চালাতে সেই গবেষণা থামিয়ে দিয়ে একাডেমিয়া থেকে বেরিয়ে গেছেন এমন সংখ্যা, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০% বেশি।

এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ক্যাটালিন কারিকো। কারিকো, কোভিডের বিরুদ্ধে এম.আরএনএ (m RNA) ভ্যাকসিন তৈরি করতে সফল হয়েছিলেন। পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল, জার্নাল এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে কয়েক বছর প্রত্যাখ্যানের পরে কারিকো বেসরকারি সেক্টরে চলে এলেন, অর্থাৎ তার কেরিয়ার গ্রাফ পাল্টে গেলো।

আর একটি উদাহরণ ডঃ অ্যামি বার ম্লিনার। নাসা থেকে ফান্ড পেয়ে, গবেষণার কাজ চালাচ্ছিলেন ১৭ বছর। তিনি আইভি লীগের অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। পরবর্তীকালে সমর্থনের অভাবে অ্যাকাডেমিক্স থেকে সরে পড়লেন।

ভারতের উদাহরণ দেখলে, দেখবেন STEM (সায়েন্স টেকনোলজি ইঞ্জিয়ারিং ম্যাথেমেটিক্স) এর ক্ষেত্রে ৪০% মহিলাদের নাম নথিভুক্ত করা গেলেও পরবর্তীতে ফ্যাকাল্টি পদের সংখ্যা মাত্র ১৬%।

কর্মজীবনে ভারসাম্যের অভাব, কর্মসংস্কৃতিতে লিঙ্গভেদে দ্বিচারিতা, যথেষ্ট উৎসাহ/ সাহায্যের অভাব এবং একজন মহিলা হিসেবে সামাজিক দিক থেকে নানা প্রতিকূলতা – মহিলাদের আকাডেমিক্স চাকরি হারাতে বাধ্য করছে, এমনটাই ধারণা।

৩৮ টি দেশের ৮৬,০০০টিরও বেশি গবেষক এবং গবেষণাপত্র। গবেষণার বিষয় – স্নায়ুবিজ্ঞান, জৈব রসায়ন, জেনেটিক্স, মলিকিউলার বায়োলজি, ইমিউনোলজি, মাইক্রোবায়োলজি এবং কৃষি। গত কুড়ি বছর ধরে এদের অনুসরণ করে দেখা গেছে, গবেষণার কাজে প্রথমে যতজন মহিলা ছিলেন, তার মাত্র ২৬% সেই গবেষণার কাজ এবং কেরিয়ারটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। অনুপাতে, এগিয়ে যাওয়া পুরুষদের সংখ্যা সেখানে ৩৬%।

অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার গবেষক, মারে কুইক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী, লুকাস সিজিমুলা। দুজনেই পোল্যান্ডের পোজনানের অ্যাডাম মিকি উইচ ইউনিভার্সিটিতে, জীব বিজ্ঞানীদের দুটো গ্রুপের কে রিয়ার অনুসরণ করেছেন। এই দুটি দলের মধ্যে প্রথমটি ২০০০ সালে, ৩৪,৯৭০ জন (৪৬% মহিলা) তাদের গবেষণা শুরু করে। দ্বিতীয় দলটি, ২০১০ সালের ৫১,২০৮ জন, (৫২% মহিলা) তাদের গবেষণা শুরু করে। নারীদের প্রতিনিধিত্ব বেশি এমন গবেষণাপত্রগুলি কুইক এবং লুকাসের কাছে বিশেষ আকর্ষণের বিষয় ছিল। এঁদের যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব সত্ত্বেও পরবর্তী ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরুষদের প্রকাশনা পেশের সংখ্যা অনেক বেশি ছিলো। ইমিউনোলজি, মাইক্রোবায়োলজি এবং কৃষিতে এই লিঙ্গ বৈষম্য কম।

সুতরাং কেবলমাত্র সমান সুযোগ তৈরি করাই যথেষ্ট নয়। মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ধরে রাখার জন্য আমাদের বিশেষ সর্তকতা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 3 =