
সময় ব্যাপারটা কি? আমরা জানি, তিনটে স্থানাঙ্ক এবং সময় — এই চতুর্মাত্রিক বিশ্বে আমরা বাস করি। ত্রিমাত্রিক বিশ্ব (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা) আমাদের কাছে অতি পরিচিত। কিন্তু গোলমাল শুরু হয় সময়কে নিয়ে। সাধারণ চিন্তায় সময়কে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ — এই তিন ভাগে ভাগ করে আমরা এক সাধারণ ধারনায় চলি। কিন্তু সত্যিই কি সময়ের গতিপথ এতটাই সোজা? একজন বিজ্ঞানীর চোখে সময় কিভাবে ধরা পড়েছে সেটা কার্লো রোভেল্লির লেখা ‘The Order of Time’-এ বেশ কিছুটা ধরা পড়েছে। আমি এই বইটার বাংলা ভাবানুবাদ করে পাঠকদের কাছে এই চিন্তার একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি। ধারাবাহিক এই লেখায় সময় সম্পর্কে একটা ধারনা তৈরি করার চেষ্টা হবে।
এক
আমি থেমে আছি, কিছুই করছি না। কোন কিছুই ঘটছে না। কোন কিছুই চিন্তা করছি না। আমি কেবল সময় চলে যাবার শব্দ শুনছি।
এটাই সময়, পরিচিত এবং অন্তরঙ্গ। সেকেন্ড, ঘণ্টা, বছরের ভিড়ে আমাদের জীবন আছড়ে পড়ে এবং এক অনস্তিত্বর দিকে আমাদের টেনে নিয়ে যায় … মাছ যেমন জলে বাস করে আমরা তেমনি সময় নামের সমুদ্রে বাস করি। আমাদের অস্তিত্ব সময়ের মাঝে বিদ্যমান। সময়ের গুরুগম্ভীর সঙ্গীত আমাদের প্রতিপালন করে, এই পৃথিবীকে আমাদের সামনে মেলে ধরে, আমাদের সমস্যায় ফেলে, ভয় পাওয়ায়, আবার শান্তও করে। এই মহাবিশ্ব ভবিষ্যতে উদ্ঘাটিত হয়, সময় টেনে নিয়ে যায় আর সময়ানুক্রমে তা প্রকাশ পায়।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, এই বিশ্বব্রহ্মান্ড এক নদীর মত এবং সেখানে মহাদেব শিব অবিরাম নেচে চলেছেন। তাঁর এই তান্ডব নাচ যেন মহাবিশ্বের ভীষণ বেগে চলমানতাকে চিত্রিত করছে। আর এই নাচ নিজেই সময়ের প্রবহমানতা প্রকাশ করছে। সময়ের প্রবহমানতা – সার্বজনীন। এ ছাড়া আর কি হতে পারে?
কিন্তু তা সত্ত্বেও বাস্তবে বিষয়টা – যা ভাবছি, এত সোজা না, বরং বেশ জটিল। পৃথিবী আমাদের কাছে সমতলের মতো লাগে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গোলাকার। আমরা দেখি আকাশে সূর্য প্রদক্ষিণ করছে কিন্তু বাস্তবে আমরাই ঘুরছি। সময়েরও তেমনি এই সর্বজনীন, অভিন্ন প্রবহমানতা নেই, অনেকটাই তফাত। প্রকৃতপক্ষে সময় — যেমন আমরা ভাবি, তার থেকে অন্যভাবে কাজ করে।
আমরা বলতেই পারি, সময় হয়তো সবচেয়ে বড় রহস্য। অন্যান্য রহস্যময় বিষয়, যেমন মনের প্রকৃতি, মহাবিশ্বের উদ্ভব, কৃষ্ণ গহ্বরের ভবিষ্যৎ বা পৃথিবীতে জীবনের কার্যকারিতা — সময়ের সাথে অদ্ভুত যোগসূত্রে গ্রন্থিত। সময়ের কিছু অপরিহার্য চরিত্র এই সব রহস্যময় বিষয়ে যুক্ত।
আমরা কেন অতীতকে মনে রাখি কিন্তু ভবিষ্যতকে না? আমরা কি সময়ে বাস করি, না কি সময় আমাদের মধ্যে বাস করে? ‘সময় চলে যায়’ – এই শব্দবন্ধের প্রকৃত মানে কি? আমাদের ব্যক্তিসত্তায় সময় কিভাবে প্রভাব ফেলে? অতীত নির্দিষ্ট কিন্তু ভবিষ্যৎ খোলা – এমনটাই আমাদের সাধারন ধারনা। কিন্তু এই ধারনা, একটা বরফের টুকরো হাতে নেওয়ার মতো – কিছুক্ষণ পরে দেখা যাবে বরফ গলে জল হয়ে হাতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে হাতে কিছুই থাকবে না।
এই সব বিষয়গুলো নিয়েই আমরা আলোচনা করব। হয়তো কিছু ভাবনা হয়ত আমাদের উদ্দীপিত করবে, কিছু আবার বিভ্রান্তিকর। হয়ত দেখা যাবে, শেষ অব্দি অপরাধীই গোয়েন্দায় পরিণত হয়েছে! হয়ত বিস্তৃত সমুদ্রের ওপরে বিশাল তারা খচিত আকাশের নীচে থেকে সময় সম্পর্কে কিছু ধারনা করার চেষ্টা করে যাব।
অসাধারণ স্যার।এই বিষয় আপনার আরো বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক আলোচনার আশায় থাকলাম।