সমুদ্রের নীচে পড়ে থাকা মৃত তিমি অন্য প্রাণীর বাসস্থান

সমুদ্রের নীচে পড়ে থাকা মৃত তিমি অন্য প্রাণীর বাসস্থান

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ জুলাই, ২০২৩

জীবন যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকেই শুরু হয় আবার নতুন জীবন। সামুদ্রিক গভীরতায়ও এ এক অমোঘ সত্য, যেখানে একটা পতিত তিমির মৃতদেহের কল্যাণে সেই তিমির মৃত্যুর পর কয়েক দশক ধরে একটা ক্ষুদ্র বাস্তুতন্ত্র তাকে ঘিরে চালু রয়েছে। তিমির বিশাল মৃতদেহগুলো ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূল থেকে সমুদ্রের ১২৫০ মিটার গভীরে ২০০৯ সালে মন্টেরি বে অ্যাকোয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ক্লায়োকোট স্লোপ নামে পরিচিত একটা স্থানে আবিষ্কার করেছিলেন। এটা হোয়েল ফল বা তিমি পতন নামে পরিচিত। ২০১২ সাল থেকে, Ocean Networks Canada (ONC) এর বিজ্ঞানীরা তিমির কঙ্কালের পচনশীলতার হার দেখতে এবং সেখানে বসবাসকারী সামুদ্রিক প্রাণী, যারা মৃত তিমির ওপর ভোজ করছে, তাদের জীবনের বৈচিত্র্যের পরিবর্তনগুলি ট্র্যাক করতে প্রায়শই এসেছেন।
ONC-এর বেন্থিক ইকোলজিস্ট ফ্যাবিও ডি লিও-র নেতৃত্বে দলটি ROV হারকিউলিস নামে একটা দূরবর্তীভাবে চালিত সাবমার্সিবলে উচ্চ-রেজোলিউশন ভিডিও -র সাহায্যে তিমি পতনের একটি ফটোগ্রামমেট্রি জরিপ নিয়েছিল। তিনি বলেছেন, এই তিমি পতনে খাদ্যসঙ্কটযুক্ত গভীর-সমুদ্রের তলদেশে খাদ্য সরবরাহ করে যাতে সামুদ্রিক জীবের খাদ্য সংস্থান হয়, ও নতুন বৈচিত্র সৃষ্টি হয়।
২০১৯ সালে, মন্টেরি বে ন্যাশনাল মেরিন স্যাংচুয়ারির বিজ্ঞানীরা ৩২০০ মিটার-গভীর ডেভিডসন সিমাউন্ট নামক স্থানে আরও একটা নতুন তিমি পতন আবিষ্কার করেছিলেন। প্রায় চার মাস পরে সেই মৃতদেহটাতে অক্টোপাস, ইলপাউট, কীট, গ্রেনেডিয়ার এবং কাঁকড়া ভরে গিয়েছিল। এই পতন অগভীর জলে হলেও, সেখানে সমুদ্রতল স্থায়ী অন্ধকারে আবৃত, কারণ সূর্যের রশ্মি এই গভীরতায় প্রবেশ করতে পারে না।
পর্যবেক্ষণ করা প্রজাতির মধ্যে রয়েছে লিম্পেট (Cocculina craigsmithi), সামুদ্রিক শামুক (Mitrella Astyris permodesta), আইসোপডস (Ilyarachna profunda), কাঁকড়া (Paralomis multispina), র‌্যাটেইল ফিশ (Coryphaenoides acrolepis), এবং টিউব ওয়ার্ম (Lamellibrachia cf. barhami)। এই টিউব ওয়ার্মগুলো ২০০৯ সাল থেকে তিমির চোয়ালে বাসা বেঁধেছিল।
ভিডিও ক্যামেরাতে অনেক সামুদ্রিক শামুক ছোট লম্বা স্তম্ভের উপরে বসে আছে বলে মনে হয়; ওই স্তম্ভ তাদের ডিম. এটাও তিমি পতনের এক বাস্তুতন্ত্র যেখানে, যেখানে ডিম থেকে শুধু নতুন সামুদ্রিক শামুক জন্মায় না, সেই ডিম অন্যান্য প্রাণী যেমন কাঁকড়ার খাদ্য।
জরিপ ছাড়াও, গবেষকরা এই তিমি পতনের আশেপাশের এলাকা থেকে সমুদ্রতলের পলির নমুনা নিয়েছিলেন। তারা পরিবেশগত ডিএনএ-এর জন্য নমুনাগুলি পরীক্ষা করবেন, যা মৃতদেহ-খাওয়া অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা, অন্য প্রাণীর খাদ্য এমন জীবের আরও জরিপ করতে সাহায্য করবে।