
রাজস্থানের দীগ জেলার বাহাজ গ্রামে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ ৩,৫০০ বছরের পুরনো একটি প্রাচীন বসতি ও শুকনো নদী পথ আবিষ্কার করেছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এটি ঋগ্বেদে বর্ণিত পৌরাণিক সরস্বতী নদীর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। এপ্রিল ২০২৪ থেকে মে ২০২৫-এর মধ্যে চালানো খননে প্রমাণ মিলেছে যে, এলাকায় খ্রিস্টপূর্ব ৩,৫০০ থেকে ১,০০০ সালের মধ্যে সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল। এটিই ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসে প্রথম প্রাচীন নদী পথের সন্ধান।
বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উপস্থাপনায় ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ জয়পুরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ বিনয় গুপ্তা বলেছিলেন যে, এই প্রাচীন নদী ব্যবস্থা আদি মানব বসতিগুলিকে পুষ্ট করেছিল, বাহাজকে বৃহত্তর সরস্বতী অববাহিকা সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত করেছিল। তিনি গুপ্ত নদীপথগুলিকে অভূতপূর্ব আবিষ্কার হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা নিশ্চিত করে যে প্রাচীন জলব্যবস্থা এখানে সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছিল।
এই বাহাজ গ্রাম মথুরা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত,। খননে আবিষ্কৃত হয়েছে আবাসনের কাঠামো, স্তরযুক্ত মাটির দেওয়াল, ভাট্টি, লোহা ও তামার তৈজসপত্র এবং প্রাচীন ক্ষুদ্র পাথরের যন্ত্র। এর বেশিরভাগই কুষাণ, মগধ এবং শুঙ্গ রাজবংশের। এটি ইঙ্গিত দেয় এ বসতির ইতিহাস আরও পুরনো, সম্ভবত প্রাক-হোলোসিন যুগের।
ধর্মীয় নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ১৫টি যজ্ঞকুণ্ড, শক্তিপূজার ভেটি, শিব ও পার্বতীর টেরাকোটার মূর্তি, যা খ্রিষ্টপূর্ব ১,০০০ সালের পুরনো। এছাড়া পাওয়া গেছে আগুন দিয়ে পোড়ানো নয় এমন সীলমোহর, যার মধ্যে দুটি ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা, যা ভারতের প্রাচীনতম ব্রাহ্মী লিপির প্রমাণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আবিষ্কৃত হয়েছে মহাজনপদ যুগের যজ্ঞকুণ্ড। সেগুলির বেশিরভাগই বেলে মাটি এবং লিখিত চিহ্নহীন তামার মুদ্রা ধারণকারী ক্ষুদ্র পাত্রে ভরা। এ আবিষ্কার ভারতীয় মুদ্রার উৎস সম্পর্কে বিদ্যমান সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। বাহাজে হাড়ের যন্ত্র, রত্ন ও ঝিনুকের চুড়ি তৈরির প্রমাণও মিলেছে। আবার, ধাতব বস্তুর আবিষ্কার ধাতুবিদ্যা সম্পর্কে বাসিন্দাদের উন্নত জ্ঞানের ইঙ্গিতও দেয়।
গবেষকদের মতে, এ আবিষ্কার ভারতের প্রাচীন ইতিহাস নতুনভাবে লিখতে সাহায্য করবে।