সাইবার গুন্ডামির মোকাবিলা

সাইবার গুন্ডামির মোকাবিলা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ মে, ২০২৫

অনলাইনে হয়রানি বা সাইবার গুন্ডামি এখন নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রায়ই খবর পাওয়া যায়, কাউকে সরাসরি হুমকি দেওয়া হচ্ছে কিংবা জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ নিয়ে নানা কুরুচিকর মন্তব্য বা আক্রমণ করা হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরেও এমন অনেক ‘নিম্নমাত্রার’ হয়রানি রয়েছে, যা চুপিসারে ঘটে চলে। আর মানুষের মনকে এগুলি সমানভাবেই ভেঙে দেয়। সম্প্রতি ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ইউ ক্লেয়ার এই নিম্নমাত্রার হয়রানির উপরেই একটি গবেষণা করেছে। ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২,৬৯৭ জন মার্কিন শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে। এরা সকলেই মধ্য এবং উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন অনলাইন হয়রানির ১৮টি ভিন্ন রূপ রয়েছে। এগুলির মধ্যে কাউকে গ্রুপ চ্যাট থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া, কারও নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা, অথবা কাউকে গোপনে অনুসরণ করা ইত্যাদি বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলির প্রভাবও মানসিক যন্ত্রণার বা ট্রমার এমনকি গভীর ক্ষতের লক্ষণ তৈরি করে। আমরা সাধারণত মনে করি, হুমকি দেওয়া বা সরাসরি আক্রমণ করাই ভয়ংকর। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, কাউকে উপেক্ষা করাও ঠিক ততটাই মানসিক আঘাত বা অবসাদের কারণ হতে পারে! এমনকি অনলাইনে গুজব ছড়ানো বা নিষ্ঠুর মন্তব্য করার প্রভাব, জাতি বা ধর্ম নিয়ে আক্রমণের মতোই ক্ষতিকর! প্রধান গবেষক ড. সামীর হিন্দুজা বলেন,“আমরা ভাবতাম কিছু ধরণের সাইবার বুলিং কম ক্ষতিকর। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সব রকমের অনলাইন হয়রানিই মানসিক ট্রমার সৃষ্টি করতে পারে। একটাকেও ছোট করে দেখার বা আদপে ‘নিম্নমাত্রার’ মনে করার সুযোগ নেই।”গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েরা এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সী কিশোররা, পুরুষদের চেয়ে বেশি ট্রমার লক্ষণ অনুভব করে। তবে, একটি বিষয় পরিষ্কার, যে যতবার সাইবার গুন্ডামির শিকার হয়েছে, তার মানসিক অবস্থাও ততটাই খারাপ হয়েছে। বয়স,কিংবা লিঙ্গ নয়; মূল উপাদানতা হল ‘হয়রানির সংখ্যা’- কার ওপর কতবার এই হয়রানি হয়েছে। অন্য আরও একটি ভয়ঙ্কর তথ্য হল, প্রায় ৮৭% শিক্ষার্থী অন্তত একবার হলেও সাইবার গুন্ডামির শিকার হয়েছে। এটি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ‘পরোক্ষ’ হয়রানির ক্ষেত্রে। যেমন কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রুপ চ্যাট থেকে বাদ দেওয়া, বা তার সম্পর্কে গুজব ছড়ানো। তাহলে উপায়? গবেষকরা বলছেন, আমাদের এখন দরকার ট্রমা-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি। মানে, স্কুল-কলেজে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে নিরাপদ বোধ করে। শিক্ষক, মনোবিদ এবং অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যেন তারা এই সমস্যাগুলো চিনতে পারেন এবং সহানুভূতির সঙ্গে সেগুলির জন্য ব্যবস্থা নিতে পারেন। একইসঙ্গে, পরিবার, বন্ধুত্ব এবং মানসিক স্থিতিশীলতাও বড় ভূমিকা রাখে। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে যেন তারা কঠিন পরিস্থিতিতে, নিজেরাই নিজেদের সামলে নিতে শেখায়। সুতরাং সময় এসেছে, এসবকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা এবং প্রতিটি কিশোর কিশোরী এমনকি শিশুর অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 5 =