
দিন কয়েক আগে বিশাল এক মহাসাগরীয় কৃষ্ণদানব অ্যাঙ্গলার মাছ (মেলানোসিয়েটাস জনসনাই) হঠাৎই উঠে এসেছে খবরের শীর্ষে। কারণ জ্যান্ত অবস্থায় তারা চলে এসেছে জলের ওপরে যেখানে জল সূর্যের আলো গ্রহণ করে। এর আগে এ রকম ঘটনা মাত্র একবারই ঘটেছিল। কিন্তু এতে এত আশ্চর্য হবার কী আছে? আছে। কল্পনা করুন, সমুদ্রের নীচে বিস্তীর্ণ এক অন্ধকার স্তর। সেখানে আলো পৌঁছায় না, পৃষ্ঠতলের অধিকাংশ প্রাণীর নাগালের বাইরে সে-স্তর। সেখানে যেসব প্রাণীর বাস তারা জানেই না আকাশে ঝলসানো সূর্যের খবর। একে বলা চলে ‘সাগর গোধূলি মণ্ডল’। সমুদ্রের ২০০ থেকে ১০০০ মিটার নীচে অবস্থিত এই সাগর গোধূলি মন্ডল এক রহস্য। কিন্তু দুনিয়াব্যাপী মহাসাগরগুলিতে এদের গুরুত্ব কতখানি তা উত্তরোত্তর স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাস্তুতন্ত্রে বায়োমাস বলে একটা হিসেব আছে। কোনো একটা বিশেষ অঞ্চলে কিংবা বাস্তুমণ্ডলে কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ে মোট যত সপ্রাণ জীব আছে তার ভরকে বলে বায়োমাস বা জৈবভর। আবার ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ে প্রাণীকুল, উদ্ভিদকুল আর জীবাণুকুল তাদের জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে যে-পরিমাণ বস্তু উৎপন্ন করে তার মোট ভরটাকেও বলে জৈবভর। হিসেব করে দেখা গেছে, বায়ো-মাসের হিসেবে প্রতিদিন পৃথিবীর ব্যাপকতম জন-পরিযান ঘটে এই সাগর গোধূলি মণ্ডলের মধ্য দিয়ে। এই স্তরের সঙ্গে বিশেষভাবে অভিযোজিত অ্যাঙ্গলার ফিশ জাতীয় মাছেদের কাছে এটাই ঘর। ইদানীংকার গবেষণা থেকে দেখা গেছে, বায়োমাস-এর হিসেবে মহাসাগরের অধিকাংশ মাছেরই আবাসস্থল এই সাগর গোধূলি মণ্ডল। আগে যা জানা গিয়েছিল তার থেকে অন্তত চারগুণ বেশি মাছ থাকে এই মণ্ডলে। প্রশ্ন হচ্ছে এই নিরেট ঘুটঘুটে অন্ধকারে বিজ্ঞানীরা কীকরে মাছেদের নিয়ে অধ্যয়ন করেন? এর একটা সরল সূত্র হল, সীলমাছ পর্যবেক্ষণ করে। এর জন্য এমনকী জলে ডুব দেওয়ারও দরকার হয় না! বাস্তবিক, উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের গোধূলি মণ্ডলে কত মাছ আছে তার একটা সূচক হিসেবে স্যান্টা ক্রুজ-এর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা উত্তরাঞ্চলের হস্তি-সদৃশ সীলমাছের (মিরুঙ্গা অ্যাঙ্গাস্টিরোস্ট্রিস) শরণাপন্ন হয়েছেন। হাতির মতো বিশাল চেহারার এই সীলমাছরা সাত মাসের একটি পর্বে মাছ শিকার করবার জন্য প্রায় এক লক্ষবার জলে ডুব মারে। অনেক সময়েই এরা মাছে সন্ধানে সাগর গোধূলি মণ্ডলের ৩০০ থেকে ৯০০ মিটার গভীরে ডুব মারে। এই বিশেষ স্তন্যপায়ী প্রজাতিটির ডুব মারার রেকর্ড খুব ভালো। বছরে এইরকম মাত্র চোদ্দোটা সীলকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করলেই মহাসাগরের ৪.৪ মিলিয়ন ঘন কিলোমিটার এলাকায় কত মাছ আছে তা বলে দেওয়া যায়। সেই সঙ্গে অবশ্য হিসেবের মধ্যে আনতে হয় বাস্তুতন্ত্র ঘটিত আনুষঙ্গিক আরও কিছু তথ্য, যথা সীলমছদের ওজন। কাজেই ঘুরপথে মহাসাগরের নীচের গোধূলি মণ্ডলের খবর ডাঙায় বসেই পাওয়া যায় এই সীল মাছদের সৌজন্যে। সূত্র: Earthshift, Museum of Science, 27 February 2025