
একটি নতুন গবেষণায়, গবেষকরা বাল্টিক সাগরের তলায় ৭,০০০ বছর আগের ডুবে থাকা নিদ্রিত ডাইয়াটম শৈবালকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এই ছোট শৈবালগুলি হাজার হাজার বছর ধরে আলো ও অক্সিজেন ছাড়া পলিতে প্রোথিত ছিল। এবার তাদের কার্যকলাপ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে লেবানিজ ইনস্টিটিউট ফর বাল্টিক সি রিসার্চ, ওয়ার্নেমুন্ডে (IOW) । এটি ‘ফাইটোওয়ার্ক’ প্রকল্পের অংশ। প্রকল্পটি বাল্টিক সাগরের পরিবেশগত পরিবর্তন বুঝতে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে বহু স্তন্যপায়ী প্রাণীই কঠোর পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। যেমন ফাইটোপ্লাঙ্কটন। এই শৈবালগুলি নিদ্রিত অবস্থায় চলে যায়, শুধু টিকে থাকবার জন্য। এই ক্ষুদ্রাকার শৈবালগুলি সাগরের তলার ঠাণ্ডা, অন্ধকার এবং অক্সিজেনহীন অবস্থায় দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় অথচ সংরক্ষিত থাকে।
ফাইটোপ্লাঙ্কটন বিশেষজ্ঞ। পূর্ব গটল্যান্ড গহ্বর থেকে পলি পুনরুদ্ধার করে, গবেষণা দলটি বিভিন্ন স্তরের নিদ্রিত ফাইটোপ্লাঙ্কটন পৃথক করেছেন। নিয়ন্ত্রিত ল্যাবে আলো ও পুষ্টি ব্যবহার করে, তাঁরা নয়টি ভিন্ন স্তরের শৈবালকে ‘জাগ্রত’ করেছেন। এগুলির মধ্যে প্রধান হল স্কেলেটোনেমা মারিনোই, যা বাল্টিক সাগরে বসন্তের শৈবাল ফুলে বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি স্তর থেকেই এই প্রজাতিটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। নয়টি স্তরের মধ্যে সবথেকে প্রাচীন স্তরটি ৬,৮৭১ বছর পুরানো। গবেষকরা দেখে আশ্চর্য হয়ে যান, এই শৈবালগুলিএতদিন টিকে ছিল এবং তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। “তারা আধুনিক প্রজন্মের মতোই বৃদ্ধি পায় এবং সালোকসংশ্লেষ করে,” গবেষক বলিয়াস উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন নমুনাগুলির শক্তিশালী বৃদ্ধিহার এবং অক্সিজেন উৎপাদন, আজকের এস মারিনোই শৈবালের নমুনার সাথে তুলনীয়। জিনগত পরীক্ষা থেকে দেখা যায়, পুনরুজ্জীবিত শৈবালগুলি তাদের উৎসের স্তরের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী তৈরি করেছে। এটি প্রমাণ করে, আসলে নমুনাগুলি একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এস মারিনোই বাল্টিক সাগরে হাজারো বছরের মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। এই গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতিটি ‘পুনরুত্থিত বাস্তুতন্ত্র’ নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত, এই ধরনের সফলতা কেবল কয়েকটি উদ্ভিদ বীজ এবং ক ব চী (ক্রাস্টেসিয়ান) অর্থাৎ শক্ত খোলক যুক্ত অমেরুদণ্ডী জলজ প্রাণীদের ক্ষেত্রে লাভ করা গেছে। পুনরুজ্জীবিত এস মারিনোই নমুনাগুলি জলজ পলির মধ্যে থেকে পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠা সবচেয়ে পুরনো জীবন্ত প্রাণীদের মধ্যে একটি। “আমরা যে এত পুরনো শৈবালকে পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছি, যা বাল্টিক সাগরের ‘পুনরুত্থান বাস্তুতন্ত্রের’ হাতিয়ার, এটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ ” বলিয়াস ব্যাখ্যা করে বলেন। এখন এই গবেষণার মাধ্যমে ‘সময় লম্ফ’ দিয়ে, বাল্টিক সাগরের বিভিন্ন বিকাশ পর্যায়ের গবেষণা করাও সম্ভব। এই পরীক্ষাগুলি থেকে অতীতের পরিবেশগত অবস্থা পুনর্গঠন এবং লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ও অক্সিজেন স্তরের পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া চিহ্নিত করা যাবে। পলি হল প্রক্সি তথ্য – অতীতের জলবায়ুর প্রমাণ। জলবায়ু পরিবর্তন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে পাল্টে দিয়েছে। সামুদ্রিক প্রজাতিগুলি পূর্ববর্তী উষ্ণায়ন ও শীতল জলবায়ু পরিবর্তনে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, এই গবেষণা সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট চিত্র পেতে সাহায্য করে। কেবল জীবাশ্ম বা ডিএনএ-র উপর নির্ভর না করে,জীবন্ত কোষগুলিকে অধ্যয়ন করা এক নতুন পথ উন্মুক্ত করেছে। এই গবেষণাটি থেকে দেখা যায়, হাজার হাজার বছরের জিনগত পরিবর্তন সরাসরি খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতের কাজগুলিতেএই পুনরুজ্জীবিত শৈবালকে বিভিন্ন পরিবেশে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিভাবে এবং কোন বৈশিষ্ট্যগুলি তাদের নিদ্রায় মগ্ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করেছে, তা দেখা যাবে। ডাইয়াটম শৈবালগুলির অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা জীবনের অভিযোজন এবং জীববৈচিত্র্যের ইতিহাসের সংরক্ষণাগার হিসেবে তথ্য তুলে ধরে। জলবায়ু, বিবর্তন ও সমুদ্রের নিচে জীবনের স্থিতিস্থাপকতার সংযোগস্থলে নতুন আলোকপাত করবে এই গবেষণা।