সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি, আমি নিরামিষাশী!

সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি, আমি নিরামিষাশী!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জুলাই, ২০২৪
নিরামিষ-খাবার

সম্প্রতি ‘লাইফ ইজ ফেয়ার’ বই পড়ে, একাধিক বলিতারকা মাংস বাদ দিয়ে নিরামিষ খেতে শুরু করেছেন। মিট বার্গারকে দামে ও জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে যাচ্ছে ভেগান বার্গার। কাতারে কাতারে মানুষ নিরামিষ খাওয়া বেশি ভালো বলে মনে করছেন। কারণ হিসাবে দেখাচ্ছেন পশুপ্রেম, পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা। খাদ্যাভাসের ইভল্যুশনে আমরা কি তাহলে প্রবল পরিবর্তনের দিকে হাঁটছি? নাকি স্রেফ পিয়ার প্রেসার, সামাজিক দায়ব্ধতার একটা মুখোশ পরতে গিয়ে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছি?
জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা বলছে, নিরামিষ খাবার আপনার জন্য সঠিক কিনা তা নির্ধারণ করবে আপনার জিন। অনেকের ক্ষেত্রেই নিরামিষ খাওয়ায় কোলেস্টেরল কমে, হৃদরোগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায় ঠিকই, কিন্তু সকলের ক্ষেত্রেই যে এটা একইরকম ঘটবে, তা নয়। গবেষকরা, দেড় লাখেরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে ২৩০০ জন মানুষকে চিহ্নিত করেছেন। এনারা কঠোরভাবে পরিমিত নিরামিষ খাবারে অভ্যস্ত। তাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়েছে জেনেটিক্স কীভাবে পুষ্টি এবং সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সুবিধাগুলো প্রভাবিত করে।
ইউজিএ ইনস্টিটিউট অফ বায়োইনফরমেটিক্সের মাইকেল ফ্রান্সিস বলেছেন, এই গবেষণা পুষ্টির মাধ্যমে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বেশ কিছু তথ্য দেয়। যেমন, গবেষকরা দেখেছেন বেশিরভাগ নিরামিষাশীদের মোট কোলেস্টেরল, এলডিএল এবং এইচডিএল-এর মাত্রা কম রয়েছে, যা হৃদযন্ত্রের পক্ষে বেশ ভালো। অন্যদিকে এদের ক্ষেত্রেই আবার ট্রাইগ্লিসারাইড নামে একধরনের ফ্যাট যা হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়, তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, এদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রাও কম। হাড়ের স্বাস্থ্য, ইমিউন ফাংশন বা রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম, যার সঠিক পরিমাণ দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ‘মাইনর অ্যালিল’ নামে পরিচিত নির্দিষ্ট জিনের বিকল্প, উপস্থিত থাকলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। আবার যাদের শরীরে, ক্যালসিয়াম বিপাকের সাথে সম্পর্কিত MMAA জিনের বিকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিলো, তাদেরই শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়ছে। নিরামিষাশীদের কারোর কারোর ক্ষেত্রে হরমোনের মাত্রার উপরও প্রভাব পড়ে। টেস্টোস্টেরন হ্রাস পায়। কিন্তু ছোটো একটা গ্রুপের বিকল্প জিন থাকায় তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণটি হল, মিথস্ক্রিয়ায় কিডনি ফাংশন এবং কিডনির পরিস্রুত করার ক্ষেত্রেও বিকল্প জিনের ভূমিকা ছিল। এই তিনটে বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত নির্দিষ্ট ও তাত্ক্ষণিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বুঝে ব্যক্তিদের পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে ব্যক্তির পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী খাবারের পরিবর্তন বিবেচনা করা উচিত বলে গবেষকরা মনে করেন। গবেষকদের এই কাজ PLOS জেনেটিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তাই হুট করে পরীক্ষা না করিয়ে, মাংস খাওয়া বন্ধ করে ডাঁটা চেবাতে শুরু না করাই ভালো। কোনটা উপযুক্ত আর কোনটা বর্জনীয়, ছেড়ে দিন ডাক্তারের পরামর্শের উপর।