সূর্যের হৃদস্পন্দন!

সূর্যের হৃদস্পন্দন!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ জুন, ২০২৪

সূর্যেরও হৃদস্পন্দন আছে! তা জটিল, বহু-ছান্দিক, যা বিভিন্ন পর্যায়ক্রমে বিভিন্নভাবে স্পন্দিত হয়। বিজ্ঞানীরা সঠিক জানেননা সৌর হৃদস্পন্দনগুলো কীভাবে চালিত হয়, তবে নতুন অনুসন্ধান জানাচ্ছে সৌরজগতের গ্রহগুলোর সাথে এর যোগাযোগ থাকতে পারে। নতুন গবেষণা অনুসারে সূর্যের ১১ বছরের কার্যকলাপ চক্র, যা শোয়াবে চক্র নামে পরিচিত, আংশিকভাবে সূর্য, শুক্র, পৃথিবী এবং বৃহস্পতির মধ্যে একটা মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়া দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এর সাথে অন্যান্য কারণ কাজ করে। জার্মানিতে হেলমহোল্টজ-জেনট্রাম ড্রেসডেন-রসেনডর্ফ ল্যাবের পদার্থবিদ ফ্রাঙ্ক স্টেফানির নেতৃত্বে নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে সূর্যের কার্যকলাপ, বেশিরভাগই অভ্যন্তরীণভাবে চালিত, তবে বাহ্যিক প্রভাবও একটা ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের এই গবেষণা সোলার ফিজিক্সে প্রকাশিত হয়েছে।
সৌর ডায়নামো নিজস্বভাবে প্রায় ১১ বছরের কার্যকলাপ চক্র তৈরি করে, যেখানে গ্রহের প্রভাবে এটা একটু ধাক্কা খেয়ে ১১.০৭ বছরের ছন্দ তৈরি করে। মোটামুটিভাবে প্রতি ১১ বছর বা তারও বেশি সময়ে, সূর্যের ক্রিয়াকলাপের মাত্রা ওঠানামা করার কারণে ধারাবাহিক রূপান্তর ঘটে। সোলার মিনিমাম বা সৌর সর্বনিম্নতে, সূর্য সবচেয়ে কম কার্যকলাপ প্রদর্শন করে। তারপরে, সূর্য পরের কয়েক বছরে ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে ওঠে। এতে সূর্যের দাগ, সৌর শিখা এবং করোনাল ভর নির্গমনের বৃদ্ধি পেতে পেতে সোলার ম্যক্সিমাম বা সৌর সর্বোচ্চতে পৌঁছোয়। সূর্য এখন সৌর সর্বোচ্চর কাছাকাছি রয়েছে। সৌর সর্বোচ্চে, সূর্যের মেরুগুলো উল্টে যায়, তারপর ক্রিয়াকলাপ কয়েক বছর যাবত সৌর সর্বনিম্ন পর্যন্ত হ্রাস পেতে থাকে তারপর আবার সর্বোচ্চে উঠে মেরু উল্টে যায়। একেই শোয়াবে চক্র বলে যা প্রতি ১১ বছরে পুনরাবৃত্তি হয়।
এরমধ্যে সৌর জগতের গ্রহের কী ভূমিকা? প্রতি ১১.০৭ বছরে, সৌর ন্যূনতম সময়ে, শুক্র, পৃথিবী এবং বৃহস্পতি একটা রেখায় মাত্র এক সপ্তাহ যাবত অবস্থান করে, তার ফলে সূর্যের ওপর তাদের একদিকে মহাকর্ষীয় টান বাড়ে। সূর্যের তুলনায় এই দুর্বল প্রভাব, তার অভ্যন্তরে পড়েনা, তবে এতে সৌর চক্রের আভ্যন্তরীণ ডায়নামোর নিয়মিত চক্রের ওপর প্রভাব পড়ে। স্টেফানি এবং তার সহকর্মীরা এর পক্ষে নতুন প্রমাণ, সূর্যের দৈত্যাকার ঘূর্ণি তরঙ্গ, যাকে রসবি তরঙ্গ বলা হয়, তা শনাক্ত করেছেন, যা গ্রহের টানের সাথে যুক্ত। এই সমস্ত প্রমাণ গাণিতিক মডেলের সাহায্যে প্রকাশিত হয়েছে।