সৌরমণ্ডলের মানচিত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

সৌরমণ্ডলের মানচিত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ জুন, ২০২৫

সারা বিশ্বের জ্যোতর্বিজ্ঞানীরা মিলে একটা নতুন গবেষণায় হাত দিয়েছেন। তা থেকে এমন এক সুসম্পূর্ণ প্রযুক্তিকৌশল বেরিয়ে এসেছে যা সৌর জগতের কোটি কোটি নতুন বস্তুর দিশা খুঁজে দেবে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় আর বেলফাস্টের কুইন্‌স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা রয়েছেন এর পুরোভাগে। এর ফলে গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং ছোটোখাটো গ্রহ সম্বন্ধে আমাদের ধ্যানধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে চলেছে।
চিলেতে অবস্থিত রুবিন মানমন্দিরে রয়েছে তিনটি আয়না লাগানো, ৮.৪ মিটার ফোকাল লেংথ বিশিষ্ট একটি দূরবীক্ষণ। আকাশের তামাম দৃশ্যক্ষেত্রটিকে তা কয়েক দিন অন্তর অন্তর অবেক্ষণ করে। তার কেন্দ্রে রয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো ডিজিটাল ক্যামেরা। এই দূরবীক্ষণ আর ক্যামেরা মিলে প্রতি রাতে ২০ টেরাবাইট (20 x 10^12) ডেটা (উপাত্ত) তৈরি করে। আগামী দশ বছর ধরে মহাজগতের এক বিলম্বিত চলচ্চিত্র ফুটে উঠবে এ থেকে। এ থেকে সৌর জগতের একটা মানচিত্র বানানো যাবে। কুইন্‌স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা “সোর্চা” নামে এক অভিনব সফটওয়্যার বানিয়েছেন যাতে সকলের অধিকার রয়েছে। এই সিমুলেটরটি রুবিন মানমন্দিরের পরিকল্পিত পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি থেকে তথ্য গ্রহণ করে। তা থেকে সৌর জগত ও তার জস্র ছোটো ছোটো জ্যোতিষ্কর সমাহারটিকে আজ কেমন দেখতে তা জানা যাবে। আটটি প্রধান গ্রহ ছাড়াও সৌরমন্ডলে আছে অজস্র ছোটো ছোটো বস্তু যারা তৈরি হয়েছিল সাড়ে চার বিলিয়ন বছর আগে। এগুলো যেন একেবারে আদিম কালের জীবাশ্ম। এদের কক্ষপথ, আকার ও গঠন-উপাদান জেনে নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহগুলোর উৎপত্তি, স্থান পরিবর্তন এবং বিবর্তনকে পুনর্গঠন করতে পারবেন। যেমন, কী করে পৃথিবীতে জল আর জৈব পদার্থ এল, দানবাকার গ্রহগুলি কীভাবে গ্রহদের কক্ষপথ বদলে দিল, পৃথিবীর কাছাকছি এসে-পড়া গ্রহগুলো থেকে কী ধরণের বিপদ ঘটতে পারে, এসব এখন এর ফলে জানা যাবে।
এই সফটওয়্যারটির বর্ণনা এবং তার পূর্বাভাস সংবলিত এক প্রস্থ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হতে চলেছে ‘দ্য অ্যাস্ট্রনমিক্যাল জার্নাল-এ। এ যেন সাদা-কালো টিভি থেকে রঙিন টিভির যুগে পদার্পণ! এর সুবাদে সৌরমণ্ডলের মানচিত্রের ফাঁকগুলি ভরাট করার এক দুর্লভ সুযোগ পাওয়া যাবে। সৌর জগত গড়ে ওঠা সংক্রান্ত পাঠ্যবইগুলো এবার সাম্প্রতিক বহু তথ্যে পূর্ণ হয়ে উঠবে। পৃথিবীর পক্ষে বিপজ্জনক গ্রহাণুগুলোকে শনাক্ত করে পথ ঘুরিয়ে দেওয়াও অনেক সহজ হবে। প্রথম পনেরো লক্ষটি গ্রহাণু শনাক্ত করতে ২২৫ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছিল; আর রুবিন মানমন্দির এক বছরেরও কম সময়ে তিরিশ লক্ষ গ্রহাণু শনাক্ত করতে পারবে। সেইসব পর্যবেক্ষণ থেকে কাঁচা মাল শনাক্ত করে সেগুলি থেকে সৌর জগতের ইতিহাসের এক খাঁটি প্রতিফলন এবার নির্মাণ করা যাবে। সোর্চা সফটওয়্যারটি সেদিক থেকে যুগান্তকারী। https://sorcha.space সাইটে যে কেউ সোর্চা সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারবেন। রুবিন মানমন্দির ২৩ জুন তাঁদের চোখ-ঝলসানো চমকপ্রদ দৃশ্যাবলি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করবেন। সারা দুনিয়া দেখতে পাবে তাঁদের অবেক্ষণের শক্তি কত। পূর্ণ মাত্রায় বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম শুরু হবে এ বছরের শেষ দিকে।
সূত্র: University of Washington. “Millions of new solar system objects to be found and ‘filmed in technicolor’ — studies predict.” ScienceDaily. ScienceDaily, 3 June 2025.

http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/06/250603213454.htm>.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 14 =