স্ত্রী-চরিত্র বর্জিত আর্থ সিস্টেম সায়েন্স!

স্ত্রী-চরিত্র বর্জিত আর্থ সিস্টেম সায়েন্স!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভূ-ব্যবস্থা বিজ্ঞান (আর্থ সিস্টেম সায়েন্স) একটা ছাতা, যার আওতায় পড়ে ভূ-মণ্ডল, আবহমণ্ডল, জলমণ্ডল, জৈবমণ্ডল নিয়ে চর্চা আর সেই সঙ্গে গ্রহ আর মহাকাশবিজ্ঞানেরও কিছু কিছু অংশ। আশ্চর্যের ব্যাপার, ভারতে বিজ্ঞানের বহু ক্ষেত্রেই মহিলাদের ব্যাপক সংখ্যবৃদ্ধি হলেও, এই বিশেষ ছাতাটির নীচে মহিলা বিজ্ঞানীদের দেখা প্রায় মেলেই না। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স, বিভিন্ন আই আই টি এবং আই আই এস ই আর- ভারতের এই তিনটি অগ্রণী বিজ্ঞান চর্চার প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে এ বিষয়ে মহিলা ভূ-বিজ্ঞানীর সংখ্যা এই মুহূর্তে তিন! অথচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছবিটা একেবারে অন্যরকম। বিশ শতকের শুরু থেকেই ইউরোপ ও আমেরিকাতে মহিলাদের ব্যাপক, এমনকি অগ্রণী উপস্থিতি দেখতে পাই। অনেকে তো রীতিমতো প্রসিদ্ধ।
এর কারণ অনেক – সাংস্কৃতিক, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি পেশাগত। মাত্র কয়েক বছর আগেও ভারতে মহিলাদের মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছিল বারণ। এখনও কোনো কোনো খনিগহ্বরে মেয়েদের নামা বারণ। ভূ-ব্যবস্থা বিজ্ঞান মূলত বহিরঙ্গন বিজ্ঞান। হিমালয়, কুমেরু, সুমেরু, ঘন জঙ্গল প্রভৃতি বিপজ্জনক জায়গায়, কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয়। কখনো কখনো ঘরবাড়ি ছেড়ে একটানা কয়েক মাস ধরে ঘুরতে হয়। স্বভাবতই নিরাপত্তা একটা চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে।
এইসব বিষয় নিয়ে থিরুঅন্তপুরম-এর ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্স-এ ২ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ একটি অধিবেশন বসেছিল। বহু তরুণী গবেষক এই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। বোঝা গেল, এ বিষয়ে মহিলাদের মধ্যে আগ্রহের অভাব নেই। পৃথিবীর আদিম যুগের বিবর্তন, সামুদ্রিক প্রাণীর খোলার প্রত্ন-জীববিজ্ঞান, ভূকম্প-বিজ্ঞান, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে উচ্চমানের আলোচনা হল। সেই সঙ্গে বিশেষ করে মহিলা বিজ্ঞানীদের কী ধরনের অসুবিধার মুখে পড়তে হয় তা নিয়ে অনেক কথা হল। আলাপ আলোচনা থেকে এই দুঃখজনক সত্যটা বেরিয়ে এল যে বহু বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানেই লিঙ্গবৈষম্যের অস্তিত্ব রয়েছে। এ ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে কড়া দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠল। আমেরিকার এসোসিয়েশন অব উইমেন জিওসায়েন্টিস্ট্‌স-এর আদলে এখানেও একটি সঙ্ঘ গড়ে তোলার কথা বলা হয়। ফল কী হবে, বলবে ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + 17 =