স্ত্রী-ডিম্বাশয় ও ডিম্বভাণ্ডার

স্ত্রী-ডিম্বাশয় ও ডিম্বভাণ্ডার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মানুষের ডিম্বাশয়ের ডিম্বভাণ্ডার কী করে গোটা প্রজনন-ক্ষম জীবন জুড়ে ডিম্বের জোগান দিয়ে চলে সে এক আশ্চর্য কাণ্ড। কী করে এটা ঘটে সেটা বোঝার পথে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা একধাপ এগিয়ে গেলেন। নেচার কমিউনিকেশনস-এ গত ২৬ আগস্ট এ গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। বাঁদর ভ্রূণের মধ্যে ডিম্বাশয়ের আদি বিকাশ থেকে শুরু করে জন্মের পরের ছয় মাসে ডিম্বভাণ্ডার যেসব কোষ আর অণুর উদ্ভব ও অগ্রগতির সুবাদে গড়ে ওঠে, সেগুলোর মানচিত্র এঁকেছেন তাঁরা। গবেষণাপত্রের সহ-রচয়িতা, ইউ সি এল এ-র ডেভেলপমেন্টাল জীববিজ্ঞানী আমান্ডের ক্লার্ক জানিয়েছেন, এই মানচিত্রটি ‘একেবারেই অজানা এক জীববিজ্ঞানের সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ কতকগুলো ফাঁক ভরাট করেছে’। এই মানচিত্রটির সাহায্যে গবেষকরা এখন ডিম্বাশয়ের ডিম্বভাণ্ডার সংক্রান্ত অসুখকে ভালোভাবে বোঝবার জন্য ল্যাবে ডিম্বাশয়ের উন্নততর মডেল বানাতে পারবেন। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) এমনই এক জটিল হরমোন ঘটিত অসুখ, যা বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনতে পারে। গর্ভনিষেকের সপ্তাহ ছয়েক পর থেকে ডিম্বাশয়ের বিকাশ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ের বীজকোষগুলি বিভক্ত ও পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জটিল শৃঙ্খল গড়ে তোলে। তাকে বলে ‘বাসা’ (নেস্ট)। এই বাসাগুলো যখন ফেটে গিয়ে খুলে যায়, তা থেকে বেরিয়ে আসে একেকটি স্বতন্ত্র ডিম্বকোষ। সেগুলো এক বিশেষ ধরণের কোষের স্তরের মধ্যে আস্তানা গড়ে। সেই কোষগুলোকে বলে প্রি-গ্র্যানুলোসা কোষ। এরা বাচ্চা ডিমগুলোকে লালন করে। তারপর যখন পরিপক্বতার সময় আসে তখন সংকেত জানায়। প্রি-গ্র্যানুলোসা কোষের বেষ্টনীবদ্ধ কোষগুলোর নাম আদি ফলিক্‌ল। এরাই গড়ে তোলে ডিম্বকোষ ভাণ্ডার।

নিষেকের সপ্তাহ বিশেক পর থেকে আদি ফলিক্‌লগুলো তৈরি হতে থাকে। ডিম্বকোষের ভিতরদিকের খাঁজগুলোতে দানা বাঁধতে থাকে তারা। ডিম্বাশয়ের কেন্দ্রের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থিত ফলিক্‌লগুলো যখন পরিপক্ব হয় তখন তারা বৃদ্ধিপ্রপ্ত হয় এবং যৌন হরমোন তৈরি করে। এই আদি ফলিকলগুলোর দৌলতেই ডিম্বাশয় পরিপক্ব ডিম বানাতে পারে, হরমোন তৈরি করে ছাড়তে পারে। পিসিওস-এর সঠিক কারণ জানা না থাকলেও এটুকু জানা আছে যে ওর মূলে আছে ওই আদি ফলিক্‌লগুলোর বৈকল্য। এ নিয়ে কাজ অবশ্য বিশেষ হয়নি। গর্ভকালে ডিম্বাশয়ের ডিম্বভাণ্ডার কীভাবে কখন গড়ে ওঠে তার মানচিত্র বানাতে পারলে পরবর্তী জীবনে সন্তন উৎপাদন সংক্রান্ত অসুখ আর সমস্যা কেন দেখা দেয় সে প্রশ্নের সুরাহা হতে পারে। ক্লার্ক বলেছেন, ‘সেটাই এ গবেষণার তাৎপর্য’।

 

প্রথমে মেয়ে-বাঁদরদের ভ্রূণের বিকাশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ভ্রূণ এবং ডিম্বাশয়-কোষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কয়েকটা নির্দিষ্ট সময়-বিন্দুর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন তাঁরা। ৩৪ দিনের মাথায় (যখন যৌনাঙ্গ স্ত্রী বা পুরুষ রূপ ধারণ করে); ৪১ দিনে মাথায় (যখন ডিম্বাশয়ের আদি বিকাশের সূত্রপাত); ৫০-৫২ দিনের মাথায় (ভ্রূণপর্বের অন্ত); ১০০ দিনের মাথায় (ডিমের বাসার প্রসারণ); এবং নিষেকের পর ১৩০ দিনের মাথায় (যখন বাসা ফেটে তৈরি হয় আদি ফলিক্‌ল)। এইগুলিকে বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ডিম্বকোষের ডিম্বভাণ্ডার গড়ে ওঠার বিবিধ ক্রান্তি-পর্বগুলোকে অনুধাবন করেন। তাঁরা দেখেন, দুটি তরঙ্গে এই প্রি-গ্র্যানুলোসা কোষগুলি গড়ে ওঠে। ৪১ থেকে ৫২ দিনের মধ্যকার দ্বিতীয় তরঙ্গটিতে গড়ে-ওঠা কোষগুলিই কেবল বাচ্চা ডিমগুলিকে আদি ফলিক্‌ল তৈরির প্রণোদনা জোগায়। তার আগে দুটি জিন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই জিন দুটিকে নিয়ে আরও বিস্তৃত গবেষণা চালালে ডিম্বকোষ ভাণ্ডারের সমস্যাগুলিকে আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করা যাবে। গবেষকরা বলছেন, ফলিক্‌লগুলো কীকরে স্বাভাবিকভাবেই সক্রিয় হয়ে ওঠে তা বুঝতে পারলে পিসিওএস-এর কারণগুলোকে আরও ভালোভাবে অনুধাবন করা যাবে।

 

 

সূত্র: livescience.com/health/fertility-pregnancy-birth/we-finally-have-an-idea-of-how-the-lifetime-supply-of-eggs-develops-in-primates?fbclid=IwdGRzaAMjWcRjbGNrAyNZsGV4dG4DYWVtAjExAAEegxPdDr4sens1yjI124egPEKS1-rFmdvnwVUxqOZAF9xk20nYVAFLVT8znX8_aem_-EmWxE0u_-ThC9vtvC3Ghg&sfnsn=wiwspwa

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 1 =