স্নায়ুরোগের জৈবচিকিৎসা রহস্য উন্মোচনে, কৃ বু

স্নায়ুরোগের জৈবচিকিৎসা রহস্য উন্মোচনে, কৃ বু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

রোগ সৃষ্টিকারী প্রোটিনগুলি, কিভাবে ক্ষতিকারক কাঠামোতে রূপান্তরিত হয় সে সম্পর্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে। এটি আলঝাইমার এবং পার্কিনসনের মতন স্নায়ুরোগগুলিকে বুঝতে খুব সহায়তা করবে । চ্যাং পিং গবেষণাগারের মিংচেন চেন এবং রাইস ইউনিভার্সিটির গবেষক পিটার ওলিনেসের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণাটি ‘রিবনফোল্ড’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (কৃ বু) মডেলের সাথে পরিচয় করায়। এটি একটি অভিনব গণনা পদ্ধতি যার নকশা করা হয়েছে স্বাভাবিক প্রোটিন গঠনের ভবিষ্যৎবাণী করার জন্য। অ্যামাইলয়েড বা অস্বাভাবিক কিংবা ক্ষতিকারক প্রোটিন, এই সমস্ত স্নায়ুরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে দীর্ঘ বা বাঁকানো তন্তু হিসেবে উৎপন্ন হয়। বিদ্যমান সরঞ্জামগুলির বিপরীতে এটি স্বাভাবিকভাবে কাজ করা প্রোটিনগুলির উপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। বিশেষভাবে ভুল ভাঁজ হওয়া কিংবা বৈচিত্র্যময়, অনিয়মিত আকারের প্রোটিনগুলিকে বোঝবার জন্য মডেলটি তৈরি করা হয়েছে। প্রধান গবেষক ওলিনেস বলেন, “অস্বাভাবিক প্রোটিন তন্তু তৈরীর ভৌত ধারণা নিয়ে তাদের গঠনের পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে ‘রিবনফোল্ড’ , প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠনের ভুলভাবে ভাঁজ হওয়া আটকাতে পারে”। রিবনফোল্ড, আলফাফোল্ড-এর মতন অন্যান্য কৃ বু ভিত্তিক ভবিষ্যৎবাণীর প্রকরণগুলিকেও ছাপিয়ে যায়। আগের মডেলগুলি, যেমন আলফা ফোল্ড-২ এবং আলফাফোল্ড-৩, সঠিকভাবে প্রোটিন ভাঁজ হওয়া এবং উপকারী দানাদার গুলি আকৃতির প্রোটিন কাঠামোর পূর্বাভাস দেওয়ার জন্যই প্রশিক্ষিত ছিল। কিন্ত রিবনফোল্ড ফিতার মতন অস্বাভাবিক প্রোটিন তন্তুর বৈশিষ্ট্যগুলি ধরার জন্য উপযুক্ত। এক্ষেত্রে গবেষকরা অস্বাভাবিক প্রোটিন তন্তুর উপর বিদ্যমান তথ্য ব্যবহার করে মডেলটিকে প্রশিক্ষিত করেছেন। তারপরে প্রশিক্ষণ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া অন্যান্য পরিচিত প্রোটিন তন্তু কাঠামোর সাপেক্ষে এটিকে যাচাই করেছেন। তাদের ফলাফলগুলি থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে, রিবনফোল্ড শরীরে কিভাবে অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরি বা বিকশিত হচ্ছে তার তথ্য দিচ্ছে। সাধারণত পূর্বে এতটা সূক্ষ্মতার সাথে এসব তথ্য প্রকাশ পায়নি। যদি এই প্রোটিনতন্তুগুলি সময়ের সাথে সাথে অদ্রবনীয় কাঠামোতে স্থানান্তরিত হয় তাহলেই রোগের অগ্রগতিতে সেটির ভূমিকা থাকেu। “বিভ্রান্ত প্রোটিন অনেকগুলি ভিন্ন কাঠামো তৈরি করতে পারে। আমাদের পদ্ধতি থেকে দেখা যায়, স্থিতিশীল পলিমর্ফগুলি অন্যান্য প্রোটিনের তুলনায় সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হচ্ছে – যা লক্ষণ প্রকাশে ধীরগতি আনে”। এই অস্বাভাবিক বহুরূপী প্রোটিনের ভবিষ্যৎবাণীতে ‘রিবনফোল্ড’ স্নায়ুরোগগুলির সাথে দ্রুততার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ক্ষতিকারক প্রোটিন সমষ্টির গঠন বিশ্লেষণের জন্য একটি পরিমাপযোগ্য সঠিক পদ্ধতি ওষুধের বিকাশের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। ওষুধ গবেষকরা আরো নির্ভুলতার সাথে রোগ প্রাসঙ্গিক প্রোটিনতন্তু কাঠামোর সাথে সংযুক্ত ওষুধ তৈরি করতে পারবেন। সহ গবেষক চেন বলেন, “গবেষণাটি কেবলমাত্র একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা ব্যাখ্যা করেনা বরং এর উপরে আরও গবেষণার সুযোগ তৈরি করে”। চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাইরেও এই গবেষণা প্রোটিন স্ব-সমাবেশ সম্পর্কে তথ্য দেয়। যা কৃত্রিম জৈব উপাদান গুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। কেন ভিন্ন প্রোটিনগুলি একাধিক রোগ সৃষ্টিকারী আকারে ভাঁজ হয় সেই রহস্যের সমাধান করে। দক্ষতার সাথে, অ্যামাইলয়েড পলিমর্ফের ভবিষ্যৎবাণী করার ক্ষমতা, ক্ষতিকারক প্রোটিনগুলি একত্রকরণের প্রতিরোধ করে ভবিষ্যতের সাফল্যকে নির্দেশ করে রিবনফোল্ড। “সারা বিশ্ব জুড়ে স্নায়ুরোগের বাঁধা মোকাবিলার করার জন্য, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” ওলিনেস জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + eight =