
আমাদের জিনগুলিকে ডিএনএ থেকে আরএনএ তে অনুলিপি করার সময় আরএনএ-র সমস্ত অংশটা প্রোটিন তৈরির কাজে লাগে না। অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো, যেগুলোকে ইন্ট্রন বলা হয়, সেগুলো কেটে ফেলা হয়, আর উপযোগী অংশগুলো, যেগুলোকে এক্সন বলা হয়, তাদের একত্রিত করা হয়। এই প্রক্রিয়াটির নাম আরএনএ স্প্লাইসিং। এটি এক জটিল প্রোটিন-আরএনএ সমাহারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যার নাম স্প্লাইসোসোম (splicosome)। এই সমাহারটি আরএনএ-র কোন অংশগুলিকে কেটে ফেলতে হবে সে সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়, সেবিষয়ে একটি নতুন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন এম.আই.টি-র গবেষকরা। এম.আই.টির গ্র্যাজুয়েট ছাত্র কনর কেনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে মানুষের মধ্যে স্প্লাইসিং ব্যাপারটা ইস্টের মতো সরল জীবের তুলনায় অনেক জটিল। মানব স্প্লাইসোসোমের কিছু অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটিকে ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। ফলে আরও জটিল জিন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ১৯৭০-এর দশকে আবিষ্কৃত আরএনএ স্প্লাইসিং প্রক্রিয়াটির সুবাদে কোষগুলি প্রোটিন তৈরির নির্দেশনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রতিটি আরএনএ-তে থাকে কোডিং অংশ (এক্সন) এবং নন-কোডিং অংশ (ইন্ট্রন)। কোষগুলি আরএনএ-তে সংকেত ব্যবহার করার মাধ্যমে জানতে পারে কোথায় কাটতে এবং কোথায় জুড়তে হবে । এর সহজ অর্থ হলো, এই প্রক্রিয়ায় একটি জিন বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি করতে পারে। কেন্দ্রকের ছোট ছোট এস-এন আর.এন.এ (snRNA) এর সাহায্যে ইন্ট্রনের উপর কাজ শুরু করে স্প্লাইসোসোম। এর মধ্যে একটি হল ছোট কেন্দ্রকীয় ইউ১ আরএনএ। এটি ইন্ট্রনের গোড়ায় সংযুক্ত হয়। এতদিন ধারণা ছিল, স্প্লাইসিংয়ের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সঙ্গে ইউ ১ ছোট আর এন-র বন্ধনশক্তি কতটা দৃঢ় সেটাই হল সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার, তারই ওপর নির্ভর করে এই ইন্ট্রনটিকে ছেঁটে ফেলা হবে কি না। কিন্তু নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে, এল ইউ সি ৭ (LUC7) নামে আর একটি প্রোটিন গোষ্ঠী মানবকোষের প্রায় ৫০% ইন্ট্রনের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। এই এল ইউ সি ৭ আবার তিন রকমের হয়। তার মধ্যে দুই রকমের এল ইউ সি ৭ একটি বিশেষ ধরনের ‘ডান-হাতি” স্প্লাইস ক্ষেত্রর সঙ্গে ক্রিয়া করে, আর অন্যটি ক্রিয়া করে একটি “বাঁ-হাতি” স্প্লাইস ক্ষেত্রর সঙ্গে। দুটি ক্ষেত্র এইভাবে আলাদা হওয়ায় নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়ায় একটি ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হয় যা বিশেষ বিশেষ ইন্ট্রনকে আরও নিপুণভাবে দূর করতে পারে। লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় এই গবেষণার বিশেষ গুরুত্ব আছে। তবে তার আগে এই অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া নিয়ে আরও তন্নিষ্ঠ গবেষণা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: https://www.sciencedaily.com/releases/2025/02/250220122913.htm?utm_source=substack&utm_medium=email