স্যামন-শৈবাল-ব্যকটেরিয়া সহযোগিতা

স্যামন-শৈবাল-ব্যকটেরিয়া সহযোগিতা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্যামন মাছ আমেরিকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ঈল নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মানুষের জীবিকা, স্যামন মাছ ধরার ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির সাথে সহাবস্থানের এক গল্প। আর এখানেই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এক অদৃশ্য শৈবাল – ব্যাকটেরিয়া সহযোগিতার শৃঙ্খল, যা পুরো নদীর বাস্তুতন্ত্র ও খাদ্যজালকে অক্ষত রাখে এবং স্যামন মাছের বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সে।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, নদীর তলদেশে থাকা ক্ষুদ্র ডায়াটম শৈবাল এপিথেমিয়া এবং এর অভ্যন্তর নিবাসী ব্যাকটেরিয়া ডাইজোপ্লাস্ট এক অনন্য “নাইট্রোজেন পাইপলাইন” তৈরি করে। শৈবাল সূর্যালোক ব্যবহার করে শর্করা বানায়, আর ব্যাকটেরিয়া সেই শর্করা ব্যবহার করে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে উদ্ভিদের খাদ্যে রূপান্তরিত করে। পরে সেই নাইট্রোজেন আবার শৈবালকে সালোকসংশ্লেষে সাহায্য করে।
অর্থাৎ, এটি প্রকৃতির এক নিখুঁত চক্র, যেখানে সকল পক্ষ উপকৃত হয়, পাশাপাশি পুরো নদীজ বাস্তুতন্ত্রও সমৃদ্ধ হয়। গবেষক জেন মার্কস একে বলেছেন, “সূর্যালোক থেকে শুরু করে মাছ পর্যন্ত এক পরিষ্কার ও টেকসই খাদ্য পাইপলাইন।”
এহেন সহাবস্থানে ঋতু বৈচিত্র্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গ্রীষ্মের শেষে নদীর তলদেশে সবুজ শৈবাল ক্লাডোফোরার গায়ে ঝুলে থাকে লালচে এপিথেমিয়ার স্তর। এই সময় এই জুটি নদীর খাদ্যজালে প্রায় ৯০% নতুন নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। ফলে জলজ পোকামাকড়ের সংখ্যা বাড়ে, আর এই পোকারাই হয়ে ওঠে বাচ্চা স্যামনদের প্রধান খাদ্য। এভাবেই নদীর তৃণভোজী পোকা থেকে শুরু করে শিকারী মাছ সবাই উপকৃত হয়।

ইউসি বার্কলের অধ্যাপক মেরি পাওয়ার বলেছেন, “সুস্থ নদী হঠাৎ গড়ে ওঠে না। এধরনের সূক্ষ্ম সহযোগী সম্পর্কই নদীকে পরিষ্কার জল, সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় মানুষের জীবনধারণের উপকরণ দেয়।”
ঈল নদীর এই আবিষ্কার এক বিশ্বজনীন বার্তা বহন করে। এ ধরনের শৈবাল–ব্যাকটেরিয়া জুটি পৃথিবীর বহু নদী, হ্রদ ও সমুদ্রে ছড়িয়ে আছে। যেখানে নাইট্রোজেনের ঘাটতি রয়েছে, সেখানেই তারা অদৃশ্যভাবে খাদ্যজালকে সমৃদ্ধ করে তুলছে।
পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত পুষ্টি উৎপাদনের এই প্রাকৃতিক ব্যবস্থা আগামী দিনের প্রযুক্তিকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে একদিন তৈরি হতে পারে পরিবেশবান্ধব জৈব জ্বালানি, দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক সার কিংবা এমন ফসল যা নিজেরাই নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারবে। এতে কৃষকের খরচ কমবে, আর পরিবেশও থাকবে সুরক্ষিত।

ঈল নদীর শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়ার এই গোপন বন্ধন দেখে বোঝা গেল প্রকৃতি নিজেই সেরা উদ্ভাবক। সে কত জটিল অথচ কার্যকর সমাধান নিজে নিজেই তৈরি করতে পারে। অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীব একসাথে কাজ করে যে শক্তিশালী চক্র তৈরি করেছে, তার ফল ভোগ করছে মানুষ থেকে মাছ সবাই।

সূত্র: Ecosystem consequences of a nitrogen-fixing proto-organelle” by Jane C. Marks, Michael C. Zampini, et.al; (8 September 2025), Proceedings of the National Academy of Sciences.
DOI: 10.1073/pnas.2503108122

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − one =