আগামী দশকের মধ্যেই হাইড্রোজেন গ্যাসের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বাড়তে চলেছে। কারণ অপ্রচলিত শক্তির সঞ্চয়ে আর পরিবহনে এই গ্যাসটা কাজে লাগে ব্যাপকভাবে। কিন্তু হাইড্রোজেন নিজে একটা দাহ্য অদৃশ্য গ্যাস, তাই এই গ্যাস এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরবরাহ করার কাজটা নেহাত সহজ নয়। এমনকি বিপজ্জনকও বটে।
এই মুহূর্তে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদনের এ পদ্ধতি প্রচলিত তাতে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস বাতাসে মেশে। কিন্তু জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন পদ্ধতিতে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদন করে দেখিয়েছেন। ওনাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভানসেস পত্রিকায়। খরচ কম আর কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও অনেকটাই কম এই নতুন উপায়ে।
কিন্তু উপায়টা কেমন? শুধুমাত্র হাইড্রোজেনের সাথেই বিক্রিয়া করে এমন পদার্থ বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন। যাতে সহজেই সঞ্চয় করা যায় আর প্রয়োজনমাফিক নিষ্কাশন করে কাজে লাগানো যায় হাইড্রোজেন।
বর্তমানে মিথেন গ্যাসের বাষ্পকে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে হাইড্রোজেন তৈরি করা হয়। তাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইডও নিঃসৃত হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। উপরন্তু উৎপাদিত হাইড্রোজেন মোটে ৭০% বিশুদ্ধ। তাতে অশুদ্ধি হিসেবে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাস থেকেই যায়। এগুলো আলাদা আলাদা করে ছেঁটে বাদ দেওয়ায় শক্তির ব্যবহারও অনেকটাই বেশি।
ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বোরন-ঘটিত এক যৌগ কাজে লাগিয়েছেন। নাম – ট্রাইঅ্যারিল বোরেন। এই যৌগটা অনুঘটকের মতো কাজ করবে হাইড্রোজেন আর ২-মিথাইলকুইনোলিনের বিক্রিয়ায়। যাতে ২-মিথাইলকুইনোলিনের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় থাকতে পারে হাইড্রোজেন। তারপর দরকারের সময় ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় এটাকে গরম করলেই সহজেই বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন নিষ্কাশন করে নেওয়া সম্ভব। গবেষকরা হিসেব করে দেখিয়েছেন নতুন পদ্ধতির কার্যকারিতা ৯৯%। উৎপাদিত হাইড্রোজেন গ্যাস ৯৯.৯% বিশুদ্ধ।