হাতি আর মৌমাছির লড়াই

হাতি আর মৌমাছির লড়াই

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

কেনিয়ার সাভো ন্যাশানাল পার্কের বাইরে ভেতরে হাতিরা খাবার, জলের সন্ধানে এমনকি সঙ্গী খোঁজার জন্যও ঘুরে বেড়ায়। তারা প্রায়শই আশেপাশের খামারের ফসলের গন্ধে সেখানে হাজির হয়। আর চাষীদের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয় তারা বিপদে পড়ে। এই হাতিদের আটকাতে, বা মানুষের আয়ে যাতে ক্ষতি না হয়, মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ এড়ানো যায়, তাই সেভ দ্য এলিফ্যান্টস (এসটিই) কাজ করছে। ন বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে কেনিয়ার ছোটো খামারে যে সমস্ত হাতি প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তারা মৌচাকের বেড়া এড়িয়ে চলে। এই প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে হাতির সংঘর্ষ কমাতে সাহায্য করেছে। যার ফলে সরাসরি তাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কনজারভেশন সায়েন্স অ্যান্ড প্র্যাকটিস জার্নালে, বলা হয়েছে এই ধরনের প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান, কৃষকদের জীবিকা এবং স্থানীয় বন্যপ্রাণী উভয়কেই রক্ষা করতে পারে। সেভ দ্য এলিফ্যান্টস (এসটিই) দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণায় ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ডব্লিউআরটিআই), কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস (কেডব্লিউএস) এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা যুক্ত ছিলেন। তবে গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে ক্রমাগত বাসস্থানের ক্ষতি, বারেবারে খরা মৌমাছির বাধার দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা কমিয়ে দেবে।
২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কেনিয়ায় দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বসতি ও পরিকাঠামো প্রসারিত হওয়ায় হাতির আবাসস্থল কমে গেছে। মানুষ এবং হাতির মধ্যে টেকসই সহাবস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সংরক্ষণের ভারসাম্য রাখার চ্যালেঞ্জ কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস (কেডব্লিউএস) কে দেওয়া হয়েছে। সেভ দ্য এলিফ্যান্টস প্রোগ্রাম এই ভারসাম্য সমর্থন করার জন্য হাতিদের নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খামার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। এখানে খামারের কাছে পরপর খুঁটির মধ্যে কয়েকটা করে মৌচাক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, যাতে হাতিরা সরাসরি বাধা পায়। মৌচাকের উপস্থিতি হাতি শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণশক্তি দিয়েও বুঝতে পারে। আগে গবেষণায় দেখা গেছে হাতি মৌমাছিকে এড়িয়ে চলে, মৌমাছির ডানার শব্দ, মৌমাছির কামড়ের ভয়ে তারা একটু সরে থাকার চেষ্টা করে। তাদের শরীরের চামড়া যথেষ্ট মোটা, ফলে মৌমাছিরা হুল ফোটাতে না পারলেও, মোটেও মৌমাছি ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। তারা হাতির শুঁড়ে, চোখে, মুখে হুল ফোটানোর চেষ্টা করে। এই মৌমাছির ভয়কে কাজে লাগিয়ে হাতিদের যেমন দূরে রাখা যাচ্ছে, তেমন বেড়াগুলো পরাগায়নে সাহায্য করে, আর মৌচাক থেকে কৃষকরা মধু ও মোম উৎপাদন করে আয় করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + eighteen =