হায়নার আচরণে বাস্তুতন্ত্রে চিতাবাঘের সংখ্যা কমছে

হায়নার আচরণে বাস্তুতন্ত্রে চিতাবাঘের সংখ্যা কমছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ জুলাই, ২০২৪
হায়না

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গ্রামীণ জনবসতি বেষ্টিত পূর্ব আফ্রিকার এক অঞ্চলে অধ্যয়ন করে দেখেছেন যে মানুষের উপস্থিতি দুটি শিকারী প্রাণীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে: চিতাবাঘ বা প্যানথেরা পারডাস এবং স্পটেড হায়েনা বা ক্রোকুটা ক্রোকুটা। হায়না দলে শিকার করে। হায়না জাতীয় প্রাণীদের বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলে ক্লেপ্টোপ্যারাসাইট অর্থাৎ যারা অন্যের খাবার ইচ্ছাকৃতভাবে চুরি করে নেয়। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রাসমাস ডব্লিউ হ্যাভমোলার বলেন যে মানুষ পৃথিবীর বুকে অবশিষ্ট বনভূমিতেও তাদের বসতি বিস্তার করেছে। এর ফলে বন্যপ্রাণীরা প্রভাবিত হচ্ছে। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে মানুষের উপদ্রব বনভূমিতে প্রতিযোগী প্রাণীদের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট করে আর হায়নাদের সুবিধা করে দেয়।
যদিও হায়নাদের সংখ্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে, আফ্রিকা এবং বিশ্বব্যাপী চিতাবাঘের সংখ্যা কয়েক দশক ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যেহেতু হায়নারা এই বিশেষ প্রাকৃতিক এলাকায় চিতাবাঘের একমাত্র প্রতিযোগী, তাই তাদের বেঁচে থাকার জন্য দুটি প্রজাতির সহাবস্থানের ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। এবং এই ক্ষেত্রে, স্থানীয় মানুষের জনসংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যেহেতু স্থানীয় মানুষ চিতাবাঘ পছন্দ করে না বা বলা যায় ভয় পায়, তাই চিতাবাঘও যতটা সম্ভব মানুষের থেকে দূরে থাকে। অন্যদিকে, হায়না এই পরিস্থিতিতে উপকৃত হয় কারণ মানুষ হায়নাদের ভয় পায় না বা তাদের তাড়া করে না। ফলস্বরূপ, হায়না মানুষের বসতির কাছাকাছি বাস করে এমনকি চিতাবাঘের বিরুদ্ধে মানুষকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে। আবার মানুষের বসতির এলাকায় সবচেয়ে বেশি শিকার পাওয়া যায় এবং হায়নারা এই অঞ্চলগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে হায়নাদের চিতাবাঘকে পরাজিত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং চিতাবাঘের অভিযোজন ক্ষমতাও হুমকির সম্মুখীন হয়। শিকারের সময় যদিও পুরুষ চিতাবাঘই দায়িত্বে থাকে, তবে হায়নারা তাদেরকে ঠিক ভয় পায় না। তারা কেবল সেই জায়গায় চিতাবাঘকে অনুসরণ করে এবং তাদের শিকার চুরি করে। কিন্তু মানুষের বসতি অঞ্চলে হায়নারা তাদের দৈহিক হীনমন্যতার ক্ষতিপূরণ করে নেয় বলে গবেষকরা মনে করেছেন কারণ পুরুষ চিতাবাঘ সে অঞ্চল থেকে বেরিয়ে যায়। অন্যদিকে, হায়নারা যখন এলাকায় থাকে তখন স্ত্রী চিতাবাঘ তাদের আচরণ সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে। তারা দিনেরবেলায় শিকার করে আর হায়নারা নিশাচর প্রাণী। এর কারণ সম্ভবত স্ত্রী চিতাবাঘরা হায়নাদের চেয়ে আকারে ছোটো এবং যে কোনও লড়াইয়ে তারা হেরে যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে হায়নারা মানুষের কাছাকাছি বসবাস করে উপকৃত হয়।
গবেষকেরা সতর্ক করেছেন একটি খাদ্য শৃঙ্খলে চিতাবাঘের মতো একটা বড়ো শিকারী প্রাণী যদি হ্রাস পায় তবে তার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়বে। অন্যান্য প্রজাতির জনসংখ্যা, যেমন বাঁদর- যাদের সংখ্যা চিতাবাঘের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে তাদের সংখ্যা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাবে, এবং সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য পরিবর্তিত হবে।

 

ছবি সৌজন্য – : Rasmus W. Havmøller  © Provided by Phys.org