হারানো প্রজাতির নেকড়েছানা

হারানো প্রজাতির নেকড়েছানা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ এপ্রিল, ২০২৫

উত্তর আমেরিকার নেকড়ে সদৃশ ডায়ার নেকড়ে প্রায় ১২,০০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। একটি বায়োটেক কোম্পানি জানিয়েছে, তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধূসর নেকড়ের ডিএনএ পরিবর্তন করে, তিনটি ডায়ার নেকড়ে ছানার প্রজনন ঘটিয়েছে। সম্প্রতি এই প্রাণীটিকে বিখ্যাত টিভি সিরিয়াল ‘গেম অফ থ্রোনসে’ দেখা গিয়েছে। কোম্পানির প্রধান বেন ল্যাম জানিয়েছেন, “আমাদের দলটি ১৩,০০০ বছরের পুরানো একটি দাঁত এবং ৭২,০০০ বছরের পুরানো একটি খুলি থেকে ডিএনএ নিয়ে এই সুস্থ ডায়ার নেকড়ে ছানাগুলির প্রজনন ঘটিয়েছে । কথায় বলে, ‘উন্নত প্রযুক্তি জাদুর মতো কাজ করতে পারে।’ আমরা যেন এই কাজের মাধ্যমে সেই জাদুর প্রভাব দেখাতে পেরেছি।’ তবে কিছু বিজ্ঞানী প্রশ্ন তুলেছেন যে এগুলি সত্যিই ডায়ার উলফ ফিরিয়ে এনেছে কি না। বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিনসেন্ট লিঞ্চ মনে করেন, “ এগুলি ডায়ার নেকড়ে নয়; এটি আসলে একটি ধূসর নেকড়ের ক্লোন, যাকে কিছু পরিবর্তনের কারণে ডায়ার নেকড়ের মতো দেখাচ্ছে”। অথচ কোম্পানিটি জানাচ্ছে, তারা দুটি জীবাশ্ম থেকে ডায়র নেকড়েরই ডিএনএ সংগ্রহ করেছিল। তাঁরা আধুনিক ধূসর নেকড়ের কোষ পরিবর্তন করেছেন ঠিকই, কিন্তু তার সাথেই প্রাচীন বৈশিষ্ট্যগুলোও যুক্ত করেছেন। সেই প্রাচীন ডিএনএ থেকে ডায়ার নেকড়ে সম্পর্কে যা জানা গেছে তা ব্যবহার করেই কোম্পানিটি আধুনিক ধূসর নেকড়ের কোষগুলি পরিবর্তন করেছে। এটি তাঁদের মতে প্রাগৈতিহাসিক প্রজাতির নিকটতম জীবিত আত্মীয়। এই সংস্থার বিজ্ঞানীরা ধূসর নেকড়ের জিনোমে ২০টি সম্পাদনা করেছেন। যার মধ্যে ১৪টি জিনে ১৫টি সম্পাদনা ছিল “সঠিক বিলুপ্ত বৈচিত্র্য”। এতে বড় শরীর এবং আরও ঘন, ফ্যাকাশে লোমযুক্ত ডায়ার নেকড়ের বৈশিষ্ট্য যুক্ত প্রাণী তৈরি করা যায়। সেই পরিবর্তিত ডিএনএ ব্যবহার করে ভ্রূণ তৈরি করা হয়, যেগুলি সারোগেট বা বিকল্প স্ত্রী কুকুরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তিতে তিনটি সুস্থ ছানার জন্ম হয়েছে। যাদের নাম রাখা হয়েছে রোমুলাস, রেমাস এবং খালিসি। তবে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, এগুলো কি আসল ডায়র নেকড়ে? অধ্যাপক মার্টেন লারমুসিউ বলেছেন, “ডায়ার নেকড়েরা ছিল একটি আলাদা প্রজাতি”। প্রযুক্তিবিদদের পালটা দাবী, তারা তো নিখুঁত জেনেটিক প্রতিরূপ তৈরি করতে চাননি। তাঁরা চেয়েছিলেন প্রকৃতিতে ডায়ার নেকড়ের শূন্যতা পূরণ করতে এবং হারিয়ে যাওয়া বৈশিষ্ট্য পুনরুদ্ধার করতে। তাদের দাবি, তিনটি ছানার মধ্যেই প্রকৃত ডায়ার নেকড়ের জিন রয়েছে। এই কোম্পানি কেবল ডায়ার নেকড়ে নয় অন্যান্য বিলুপ্ত প্রজাতিও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, যথা উলি ম্যামথ এবং তাসমানিয়ান বাঘ। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন নেকড়ে প্রজাতি হল লাল নেকড়ে। সংস্থাটির দাবি, তারা ক্লোন করে চারটি এই লাল নেকড়েরও চারটি ছানার প্রজনন ঘটিয়েছে। তাদের এই প্রযুক্তিটি বিপন্ন প্রাণীর জনসংখ্যা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। নেকড়ের ছানাগুলিকে ২,০০০ একরের একটি সংরক্ষণ ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে। ১০ জন সারাক্ষণের কর্মীদল তাদের দেখভালে রয়েছেন। ক্যামেরা, নিরাপত্তা কর্মী এবং ড্রোন ব্যবহার করে তাদের উপর নজরদারি চলছে অবিরত।

কৃতজ্ঞতা : দময়ন্তী চক্রবর্তী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + 17 =