অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা, হিগস বোসন নিয়ে এখনও পর্যন্ত করা সবচেয়ে সূক্ষ্ম গবেষণাগুলির একটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। হিগস বোসন সেই রহস্যময় কণা, যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, বস্তুর ভর কোথা থেকে আসে। সার্নের বৃহৎ হ্যাড্রন কোলাইডার (LHC)-এর ATLAS সহযোগী প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে অক্সফোর্ডের পদার্থবিদরা একটি ঐতিহাসিক ফল প্রকাশ করেছেন। তারা এই প্রথমবার সরাসরি প্রমাণ পেয়েছেন, হিগস বোসন দুটি মিউওনে ভেঙে যেতে পারে (H→μ⁺μ⁻)। এই ভাঙন অত্যন্ত বিরল। প্রায় ৫,০০০টি হিগস ক্ষয়ের মধ্যে মাত্র একটির ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে। হিগস ক্ষেত্র কীভাবে দ্বিতীয় প্রজন্মের মৌলিক কণার সাথে ক্রিয়া করে, তার প্রথম স্পষ্ট ধারণা দিল এই আবিষ্কার। ফলত, বিজ্ঞানীরা যাচাই করতে পারছেন, হিগস প্রক্রিয়া কি সব ধরনের কণার জন্য একইভাবে কাজ করে, না কেবলমাত্র সবথেকে ভারী কণার ক্ষেত্রেই এটি বেশি প্রকট? অক্সফোর্ডের অধ্যাপক ড্যানিয়েলা বোর্তোলেত্তো বলেছেন, “পাঁচ হাজারে একবার ঘটে এমন একটি সংকেত খুঁজে বের করা আসলেই অভ্রান্ততা ও অধ্যবসায়ের প্রমাণ। আমরা হিগসের আরও গভীর রহস্য উন্মোচনের পথে এগোচ্ছি।” এই ক্ষীণ সংকেত শনাক্ত করতে, গবেষকেরা LHC-এর রান-২ এবং রান-৩—দুটি পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করেন।দুটি তথ্যের একত্রে পর্যালোচনা করে দলটি ৩.৪ সিগমা তাৎপর্য অর্জন করে। যা প্রত্যাশিত মানের (২.৫ সিগমা) চেয়ে বেশি শক্তিশালী প্রমাণ। অর্থাৎ, স্ট্যান্ডার্ড মডেলের পূর্বাভাস অনুযায়ী হিগস বোসন সত্যিই মিউওনের সাথে যুক্ত হয়। এমন সূক্ষ্ম পরিমাপের জন্য অতুলনীয় অভ্রান্ততা দরকার । অক্সফোর্ড দলের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে মিউওন শনাক্তকরণ, যন্ত্রের সামঞ্জস্য, ক্যালিব্রেশন, এবং গতিমান নির্ণয়–সংক্রান্ত প্রযুক্তি উন্নত করার চেষ্টা করছিলেন। এসব প্রযুক্তি ছাড়া এই বিরল সংকেত, পটভূমির বিপুল সংখ্যক সাধারণ মিউওন জোড়ার মধ্য থেকে আলাদা করে দেখা সম্ভব হতো না। উন্নত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ ব্যবহার করে, গবেষকেরা সেই ’হিগস’ স্বাক্ষরটিকে আলাদা করেছেন।অধ্যাপক বোর্তোলেত্তো, ড. এলেনোরা রসি, ওয়েতাও ওয়াং, চুনহাও তিয়ান এবং ইয়াংফান ঝ্যাং প্রমুখ বর্তমান অক্সফোর্ড সদস্য এই গবেষণায় মূল ভূমিকা পালন করছেন। আগের পর্যায়ে জিয়াকোমো আর্তনি, সিইউয়ান ইয়ান, মিহা জগুবিকসহ আরও কয়েকজন গবেষক বিশ্লেষণ ও ATLAS ডিটেক্টরের উন্নতি ঘটানো। এই অগ্রগতি, অক্সফোর্ডের অধ্যাপক ইয়ান শিপসির দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির ফলও বটে। তিনি বহু বছর আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে H→μ⁺μ⁻ ক্ষয় ভবিষ্যতে হিগস পদার্থবিজ্ঞানের সূক্ষ্ম পরীক্ষা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সেই অনুযায়ী তিনি গবেষণার সক্ষমতা গড়ে তুলেছিলেন। ড. রসি বলেন, “হিগস সক্রান্ত বিষয়ে, আমরা এখন নিখুঁত পরিমাপের যুগে প্রবেশ করছি। প্রতিটি নতুন ফল, আমাদের বোঝাপড়ার সীমানা আরও প্রসারিত করছে।“ সম্পূর্ণ গবেষণাটির প্রতিবেদন ATLAS-এর পদার্থবিজ্ঞান ব্রিফিং এবং বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র : Evidence for the dimuon decay of the Higgs boson in pp collisions with the ATLAS Detector, G Aad et al, Physical Review Letters, 135, 231802, 3rd December 2025.
