বেড়ালের পিঠে হাত বোলালে, অথবা কম্বলের তলায় পা বারবার ঘষলে আমাদের হাতের বা পায়ের রোম খাড়া হয়ে যায়। এর কারণ সকলের জানা- স্থির তড়িতের জন্যই এরকম হয়। মিলেটাসের গ্রীক দার্শনিক থ্যালেস ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম ঘর্ষণ থেকে তৈরি হওয়া এই স্থিরতড়িতের কথা জানান। পশম দিয়ে অ্যাম্বার ঘষার পরে, তিনি দেখেছিলেন পশম ধুলোকে আকর্ষণ করে। এটা মোটামুটি স্বীকৃত যে অন্তরক পদার্থ দিয়ে ঘর্ষণে স্থিরতড়িৎ সৃষ্টি হয়। ৬০০ ক্রিস্টপূর্বাব্দে আবিষ্কৃত এই স্থির তড়িতের উৎপত্তির কারণ এতদিনে জানা গেল। যখন একটা বস্তু অন্য বস্তুর ওপর ঘষে চলে যায়, তখন সেই বস্তুর সামনে এবং পেছনের অংশ ভিন্ন শক্তি অনুভব করে। শক্তির এই পার্থক্য বস্তুর সামনে এবং পেছনের অংশে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি করে। আর বৈদ্যুতিক চার্জের পার্থক্য একটা প্রবাহ তৈরি করে, যা হালকা ঝাঁকুনি দেয়। এই গবেষণা ন্যানো লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
লরেন্স মার্কস হলেন নর্থওয়েস্টার্ন ম্যাককর্মিক স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পদার্থ বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগের একজন এমেরিটাস অধ্যাপক। মার্কস ও তার দল ২০১৯ সালে স্থিরতড়িৎ সৃষ্টি রহস্য উদঘাটন শুরু করেন। ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারে প্রকাশিত গবেষণায়, তারা জানিয়েছিলেন দুটো উপাদান একসাথে ঘষলে সেই উপাদানগুলোর পৃষ্ঠে ক্ষুদ্র উদ্গত অংশ বেঁকে যায়। এই বাঁকানো, উদ্গত অংশগুলো ভোল্টেজের জন্ম দেয়। উদ্গত অংশের ভিন্ন ভিন্ন বিকৃতির জন্য ভিন্ন চার্জ তৈরি হয়। তাদের মডেল যে ধারণাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে তা হল ‘ইলাস্টিক শিয়ার’। তারা জানিয়েছেন, ঘষার সাথে স্থিরতড়িতের ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। টেবিলে রাখা একটা প্লেট ঠেলে সরানোর সময় প্লেটটা ঘষার বিরোধিতা করবে। ঠেলা বা ঘষার সময় এই বাধার ফলে বৈদ্যুতিক চার্জ প্রবাহিত হতে থাকে। গবেষকদের নতুন মডেল এই স্থিরতড়িতের তড়িৎ প্রবাহ সফলভাবে মাপতে পারছে।
স্থিরতড়িতের জন্য রোম খাড়া হয়ে ওঠা বেশ মজার হলেও স্থির তড়িৎ থেকে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গে কারখানায় আগুন ধরতে পারে, বিস্ফোরণ হতে পারে। গবেষকরা এর প্রক্রিয়া জানতে পারলে, এই বিপত্তি রোধ করার উপায়ও খুঁজে পাবেন। পৃথিবী তৈরি হওয়াতে স্থিরতড়িতের বড়ো ভূমিকা রয়েছে, গ্রহের গঠনের সময় নানা কণা একত্রিত হওয়ার পেছনে কণায় কণায় ঘষা লেগে তৈরি হওয়া স্থিরতড়িৎ দায়ী।