৩০ হাজার বছর বয়সী আলো

৩০ হাজার বছর বয়সী আলো

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ অক্টোবর, ২০২১

বারান্দার রোদে গা এলিয়ে বসে আছেন মিত্রবাবু। । শীতের দুপুরে ভারি মিঠে রোদ। মিত্রবাবু যে রোদ গায়ে মাখছেন তার বয়স কত জানেন? তিরিশ হাজার বছর। নাহ্, সূর্যের বয়সের কথা নয়। যে আলোর কনা রোদ হয়ে মিত্রবাবুর শরীরে খেলে যাচ্ছে সেই আলোক কনার বয়স তিরিশ হাজার বছর। বিশ্বাস করা যায় না ঠিক! ব্যাপারটা খোলসা করা যাক।
সূর্য থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠে আলো আসতে সময় লাগে কতক্ষন?
বিজ্ঞানের ছাত্র মুহুর্তে উত্তর দেবেন সাড়ে আট মিনিট।
কিন্তু কেউ যদি বলেন, সূর্য থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠে আলো আসতে সময় লাগে ৩০ হাজার বছর। শোনা মাত্রই রে রে করে উঠতে দুসেকেন্ডও সময় লাগবে না। তবুও একথা সত্যি।
সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে নয় কেন্দ্র থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠে আলো আসতে সময় লাগে ৩০ হাজার বছর। আসলে সূর্যের কেন্দ্র থেকেই সূর্যের পৃষ্ঠে আলো আসতে সময় নেয় ৩০ হাজার বছর। তারপর মাত্র সাড়ে আট মিনিটে আলো পৃথিবী পৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। অনেকটা জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থেকে তারপর ফাঁকা রাস্তা পেয়ে সাঁই সাঁই করে গাড়ি ছোটার মতো। কিন্তু কেন এমন হয়?
সূর্যের কেন্দ্রে অবিরাম চলে পারমাণবিক বিক্রিয়া। যার পারিভাষিক নাম ফিউশন। এই বিক্রিয়ায় সৃষ্ট প্রচন্ড চাপ ও তাপে দুটি প্রোটন একত্রিত হয়ে সৃষ্টি হয় ডিউটেরন। আবার প্রতিটি ডিউটেরন একটি প্রোটনের সাথে মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয় ‘হিলিয়াম-৩’। দুটি হিলিয়াম-৩ মিলিত হয়ে আবার সৃষ্টি হয় ‘বেরিলিয়াম-৬’। এটি আসলে মৌল। কিন্তু খুবই অস্থিতিশীল। তাই খুব দ্রুত ভেঙে গিয়ে তৈরি করে দুটি প্রোটন ও হিলিয়াম-৪। এভাবেই নিউক্লিয়াস ফিউশনের ফলে সূর্যের কেন্দ্রে বিপুল তাপ, শক্তি ও আলো সৃষ্টি হয়। এই আলোক কনার নামই ফোটন। ফোটন কনা খুব দ্রুত কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠে আসতে পারে না। প্রধান কারন কেন্দ্রের ঘনত্ব। সূর্যের কেন্দ্রের ঘনত্ব জলের থেকে প্রায় দেড়শ গুন। ফলে ফোটন কনা সেখানে সোজা না গিয়ে জিগজ্যাগ পথে চলে। মাত্র এক সেমি পথ চলার পরেই ফোটন কনার গতিপথ হয় বিক্ষিপ্ত। এভাবে বারংবার বিক্ষিপ্ত হতে হতে অসংখ্যবার ফোটনের গতিপথ বদলায়। তাছাড়াও কেন্দ্র থ্রকে পৃষ্ঠ পর্যন্ত আলাদা আলাদা স্তর গুলোও পেরোতেও বেগ পেতে হয় ফোটন কনাকে। কেননা, রেডিয়েটিভ জোনের মতো অতি ঘনত্ব যুক্ত স্তরও অতিক্রম করতে হয় ফোটন কনাকে। তাই সব মিলিয়েসূর্যের কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠ পর্যন্ত ১০ লক্ষ কিমি পথ (সূর্যের ব্যাসার্ধ) যা শূন্য স্থানে ফোটন অতিক্রম করত মাত্র ৩ সেকেন্ডের কিছু বেশি সময়ে সেই পথ পাড়ি দিতেই ফোটনের লাগে ৩০ হাজার বছর। তারপর সূর্যের পৃষ্ঠদেশ থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের ১৫ কোটি কিমি পথটা ফাঁকা বাইপাস। মাত্র সাড়ে ৮ মিনিটেই যাত্রা শেষ। অর্থাৎ যে আলোর কনা মিত্র বাবু গায়ে মাখেন শীতের দুপুরে তার বয়স অন্তত ৩০ হাজার বছর। আজ এক্ষুনি সূর্যের কেন্দ্রে যে ফোটন কনা বা আলো জন্মালো তা আমাদের পৃথিবীর পিঠে আসবে আজ থেকে ৩০ হাজার বছর পরের কোনও সকালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × one =