স্পাইডার গেকো বা একপ্রকার টিকটিকি। বিজ্ঞানসম্মত নাম – রিনোগেকো মিসোনেই। এই নিশাচর টিকটিকিদের বাসস্থান ইরানের লুট মরুভূমি। উল্লেখ্য লুটের সর্বোচ্চ উষ্ণতা প্রায় ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চলগুলির একটি। যে উষ্ণতা বেঁচে থাকার জন্যে অস্বাভাবিক। এবং তারওপরেও ইকোলজিস্টদের বিবেচনায় এটি ভয়ানক অনুর্বর স্থানও। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এই লুট মরুভূমিতেই ঐ প্রজাতির টিকটিকির বাস। তাই বিজ্ঞানীরা বুঝতে চাইছিলেন এই ধরণের উষ্ণ এবং অনুর্বর স্থানে কীভাবে ইকো সিস্টেম কাজ করে এবং এই টিকটিকিরা বেঁচে থাকে।
পরীক্ষার জন্যে জার্মানির স্টুটগার্টের রাজ্যস্তরের প্রাকৃতিক ইতিহাসের মিউজিয়ামের পতঙ্গবিদ হোসেন রাজেই এবং তার সহকারীরা ৬ টি গেকো বা টিকটিকি নেন। ডি এন এ বারকোডিং ব্যবহার করে ৬টি টিকটিকির পাকস্থলির বিষয়বস্তু পরীক্ষা করেন রাজেইরা। এই পদ্ধতিতে প্রজাতি সনাক্তকরণের জন্যে নেওয়া ডেটাবেসের সাথে একগুচ্ছ ডিএনএ -র তুলনা করা হয়। অনেকটা শপিংমলে যেমন প্রতিটি দ্রব্য সনাক্তকরণে বারকোড স্ক্যান করা হয় তেমন। রাজেই জানান, এই পদ্ধতি ভীষণ নিঁখুত, ব্যাপক ও বিশ্বাস্যোগ্য।
পরীক্ষায় দেখা যায় টিকটিকির হজম করা খাদ্যে মোট ৯৪ টি প্রজাতির ডি এন এ রয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৯৪টি ভিন্ন প্রজাতির জীবকে ঐ টিকটিকিগুলি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই ৯৪ প্রজাতির মধ্যে ৮১ শতাংশ আবার লুট মরুভূমির বাইরের- এ তথ্য গত বছরের ১৮ই নভেম্বর রাজেই ও তার দল ‘জুওলজিকাল সিস্টেমেটিক্স অ্যাণ্ড ইভলিউশানারি রিসার্চ’ নামক জার্নালে প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য এই যে ৯৪ টি প্রজাতির জীবকে টিকটিকিগুলি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ঐ জীবগুলি বেশিরভাগই ডানাওয়ালা পোকামাকড়। এদের মধ্যে আছে – মাছি, মথ, বোলতা ইত্যাদি। এই পোকামাকড়গুলি মরুভূমির সীমানার বাইরে থেকে পরিযায়ী হিসেবেই এসেছিল মরু অঞ্চলে। বাকি কিছু মথ ও মাকড়সা অবশ্য ঐ মরু অঞ্চলেরই বাসিন্দা, যাদের টিকটিকি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। রাজেই রা অবশ্য মরুভূমির বুকে মাকড়া বা মথ এজাতীয় জীব পাননি। ফলে রাজেই বলেন, আমাদের দৃষ্টির আড়ালেও অনেক জীব এ মরুভূমির বুকে রয়ে যাচ্ছে।