উত্তর অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রথম মানুষের ব্যবহৃত পাথর ও কারুশিল্পের যন্ত্রাদি, গুহাচিত্র এবং অন্যান্য নিদর্শন। ১৯ শে জুলাই নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, প্রথম মানুষ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পৌঁছায় পঁয়ষট্টি হাজার বছর আগে। কারুকাজের হাত বেশ পোক্ত ছিল তাদের।
২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মেয়াদে অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম মানববসতি মাদজেদবেবে-র খননকার্যে নৃতত্ত্ববিদরা আদিম নিদর্শনের তিনটি স্তর খুঁজে পেয়েছেন। সবচেয়ে পুরনো গভীরতম স্তরে পাওয়া গেছে দশহাজারের বেশী প্রত্নসামগ্রীর ধ্বংসাবশেষ। পৃথিবীর প্রথম পালিশ করা কুঠারের মাথা, অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীনতম শস্যপেষাই যন্ত্র, রঙ তৈরির যন্ত্র, উনুন এবং আরও বিভিন্ন নিদর্শনের অংশবিশেষ পাওয়া গেছে খননে।
সিডনী ইউনিভার্সিটির আর্কিওলজিস্ট পিটার হিস্কক মনে করেন, অস্ট্রেলিয়ায় আসা প্রথম মানুষ যথেষ্ট দক্ষ ছিল। রাতের জন্য আলোর ব্যবস্থা, খাবারের জন্য শস্যপেষা বা তাদের গুহার গায়ে রঙের ছাপ- এইসব তাদের পারদর্শিতার নমুনা বলেই দাবী হিস্ককের।
৪৭০০০ থেকে ৬০০০০ বছরের মধ্যেই কোনো এক সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছিল প্রথম মানুষ, আগের অনুমান তাই’ই বলে। কিন্তু, সহগবেষক জেনোবিয়া জেকবস বলছেন, “নৃতত্ত্ববিদদের মধ্যে এই নিয়েই ধন্দ ছিল, কারণ কোনো স্পষ্ট প্রমাণ এতদিন মেলেনি”।
জেকবস ও তাঁর সহকর্মীরা ‘অপটিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স ডেটিং’ নামের নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ করেছেন। খনিজ দানা শেষ কবে সূর্যালোকের মুখ দেখছে, এই পদ্ধতিতে সেই প্রাচীনত্ব নির্ণয় করা সম্ভব। রেডিওকার্বন ডেটিং-এর সাহায্যে আগুনের চিহ্ন থেকে চারকোলের বয়স জানা যায়। ভূস্তরের নীচে ২.১৫ থেকে ২.৬০ মিটার খননে পাওয়া সর্বাধিক প্রাচীন স্তরের বয়স আনুমানিক ৫৩০০০-৬৫০০০ বছর।
পিটার হিস্ককের মতে, নিখুঁততর পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন। কারণ, বালির নীচে প্রোথিত নিদর্শনগুলি সময়ের সাথে সাথে সামান্য স্থানপরিবর্তনে বাধ্য।
আদিম মানুষ ঠিক কোন সময়ে আফ্রিকা ছেড়ে পৃথিবীর অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়লো, গবেষণা থেকে উঠে আসতে পারে এমন বহুকাঙ্ক্ষিত তথ্যও। বিভিন্ন মহাদেশে আদিম হোমিনিডের সাথে আধুনিক মানুষের মিলনে কীভাবে প্রজাতির বিকাশ ঘটেছিল, উদাহরণ হিসেবে ইওরোপের নিয়ারডার্থাল বা এশিয়ার ডেনিসোভান কীভাবে এলো পৃথিবীতে সেই সুলুকসন্ধানও দিতে পারে এই গবেষণা।