অক্টোপাস, স্কুইড নিজেদের DNA অক্ষুন্ন রেখে RNA পাল্টাতে পারে

অক্টোপাস, স্কুইড নিজেদের DNA অক্ষুন্ন রেখে RNA পাল্টাতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৪ জুন, ২০২৩

সম্পাদক কোনো শব্দে পরিবর্তন করলে, লেখক বেশ ক্ষুব্ধ হন। লেখাতে একটা শব্দ পালটে যাওয়াতে বিশেষ কোনো ফারাক না পড়তেও পারে, কিন্তু প্রোটিন তৈরির জেনেটিক কোডে একটা পরিবর্তন হলেও তাতে সেই প্রোটিনের কাজ ব্যাহত হয়ে যায় এমনকি মারাত্মক বিপদের সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। তাই জেনেটিক কোডিং পরিবর্তন না করে এক রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে খুব কম সময়েই দেখা যায়, এই পরিবর্তনের ফল ভালো হয়, যেমন অক্টোপাসের ক্ষেত্রে।
অক্টোপাস আমাদের পক্ষে বেশ একটা বিজাতীয় প্রাণী, ওরা ডাঙ্গার প্রাণী বা জলজ প্রাণীর থেকে অনেকক্ষেত্রেই আলাদা। ওদের নরম নমনীয় শুঁড় দিয়ে, ওর যা স্পর্শ করে তাই খেতে থাকে, আর প্রত্যেকের নিজস্ব একটা মাথা আছে। এদের চোখ বর্ণান্ধ, তা সত্ত্বেও ত্বকের স্পর্শের মাধ্যমে এদের আলোর অস্তিত্ব বোঝার ক্ষমতা আছে। এরা ছদ্মবেশ ধরতে বেশ পটু, পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য বা শত্রুকে ভয় দেখাতে ত্বকের রং বা তার প্রকৃতি পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হল, এরা আণবিক স্তরে এদের জেনেটিক কোডে একটা লাল কালির ফোয়ারা ছড়িয়ে দেয়, যা সম্পাদকের লেখা পালটানোর মতো জেনেটিক কোডকে পালটে দেয়। DNA- র জেনেটিক তথ্যগুলো থেকে RNA প্রতিলিপি গঠন করে নতুন প্রোটিন তৈরি করে। এই আণবিক কালি RNA -কে পালটে দেয় কিন্তু DNA -কে অক্ষত রাখে।
উডস হোল, ম্যাসের মেরিন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরির কমপ্যারেটিভ ডেভেলপমেন্টাল জীববিজ্ঞানী ক্যারোলিন আলবার্টিন বলেছেন, অক্টোপাস যেন যাদুকর, তাদের কাছে বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য নানা ধরনের কৌশল আছে। হয়তো RNA সামান্য অদলবদল করে তারা যে যে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, সেগুলোর সমাধান করতে পারে।

নরম দেহবিশিষ্ট সেফালোপডের সমস্ত শুঁড়ে RNA –র এই পরিবর্তন দেখা যায়, আর এই ধরনের কাছাকাছি প্রজাতির মধ্যেও RNA -র অদলবদল লক্ষ করা যায়। অন্যান্য মোলাস্কা কিন্তু এরকম পরিবর্তনে সাড়া দেয় না।

মেরিন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরির অপর একজন মলিকুলার নিউরোবায়োলজিস্ট, জসুয়া রোসেনথ্যাল জানান, RNA -র পরিবর্তন সমুদ্রের গভীরে বসবাসকারী আরো কিছু প্রাণীতে দেখা যায়। প্রায় প্রতিটা বহুকোশী প্রাণীতে RNA পরিবর্তনকারী ADAR এনজাইম, অর্থাৎ অ্যাডিনোসিন ডিঅ্যামাইনেজ পাওয়া যায়। সেফালোপডের শরীরে দু ধরনের ADAR এনজাইম পাওয়া যায়।

রোসেনথ্যাল আরো জানান মানুষের শরীরেও এই ADAR এনজাইমের নানা সংস্করণ দেখা যায়, আমাদের মস্তিষ্কে বহু RNA অদলবদল করা হয়। বিগত দশকে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মানুষের RNA -র লক্ষ লক্ষ স্থানে সম্পাদনা হয়েছে।