অপেক্ষাকৃত কম জটিল স্বরযন্ত্র কী মানুষের কথা বলার নেপথ্য কারণ

অপেক্ষাকৃত কম জটিল স্বরযন্ত্র কী মানুষের কথা বলার নেপথ্য কারণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৬ নভেম্বর, ২০২২

মানুষের অনন্য শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য হল, কথা বলার ক্ষমতা ও তার মস্তিষ্কের সামর্থ্য। সায়েন্স পত্রিকায় ১১ই অগাস্ট প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, মানুষের স্বরযন্ত্রের সরলীকরণের ফলে হয়তো তার পক্ষে নানা ভাবে, বিভিন্ন ধরনের কথা বলা সম্ভব হয়েছে। উন্নত বাঁদর জাতীয় প্রজাতির মধ্যে গবেষণা, নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা, গাণিতিক মডেলিং- এর ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বরযন্ত্রের (ল্যারিনক্স) পর্দার অবলুপ্তির ফলে, বিভিন্ন ভাবে মানুষ মৌখিক কথা বলা এতো উন্নত হয়েছে।
জাপানের কিয়াটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তাকেশি নিশিমুরা বলেছেন, কীভাবে বিবর্তনের ফলে পা দিয়ে হাঁটা সম্ভব হয়েছে, মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে , তা ফসিল থেকে গবেষণা করা জানা যেতে পারে। কিন্তু কীভাবে বিবর্তনের ফলে কথা বলা সম্ভব হল তা ফসিল থেকে জানা সম্ভব নয়, তাইজন্য তা বেশ রহস্যময় থেকে গেছে। তার মতে বাঁদর জাতীয় প্রাণীর স্বরযন্ত্রের ওপর তুলনামূলক গবেষণা এ বিষয়টি জানতে সাহায্য করতে পারে। এখান থেকেই তিনি ও তার সহযোগীরা স্বরযন্ত্রের বিবর্তন সন্ধান করতে শুরু করেছেন – মানুষ কীভাবে কথা বলা, গান করা, ভাব আদানপ্রদান করা শুরু করল।
নিশিমুরার গবেষণাগার থেকে কিছুটা দূরেই অবস্থিত, জাপান মাঙ্কি সেন্টার, যা বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম বাঁদর জাতীয় প্রজাতির প্রাণীকেন্দ্র। সেখান থেকে তারা এই সব প্রজাতির প্রাণীদের মৃতদেহ থেকে স্বরযন্ত্র সংগ্রহ করেছেন। MRI ও tomography (কম্পিউটারের মাধ্যমে এক্স-রে সাহায্যে ছবি দেখা) – র সাহায্যে নিশিমুরা ও তার সহযোগীরা ২৫ টা গোত্রের ৪৩ টা প্রজাতির স্বরযন্ত্রের গঠন দেখেছেন। গবেষণায় তারা দেখেছেন, প্রতিটি স্বরযন্ত্রের স্বরনালীতে, একটা পাতলা পর্দা আছে, যা একটা খাঁজ বা সালকাস-কে পৃথক করেছে। কিন্তু এটা কোনো মানুষের স্বরযন্ত্রে থাকে না। এই পর্দাটা সমস্ত বাঁদর জাতীয় প্রাণীর পূর্বপুরুষের স্বরযন্ত্রেও পাওয়া গেছে, একমাত্র মানুষের স্বরযন্ত্রে এটা অনুপস্থিত। হয়তো এর অনুপস্থিতিই মানুষকে কথা বলতে সমর্থ করেছে।