
ইলাস্টিক টার্বুলেন্সে পূর্বের প্রত্যাশার চেয়ে ধ্রুপদী নিউটনীয় টার্বুলেন্সের সাথে আরও বেশি মিল দেখা যাচ্ছে। রক্ত, লিম্ফ তরল এবং অন্যান্য জৈবিক তরল প্রায়শই অপ্রত্যাশিত এবং কখনও কখনও বিভ্রান্তিকর বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। এগুলির মধ্যে অনেকগুলিই অ-নিউটনীয় ফ্লুইড, যা চাপ এবং চাপের প্রতি তাদের অ-রৈখিক প্রতিক্রিয়া দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়। এর অর্থ হল অ-নিউটনীয় ফ্লুইডগুলি সর্বদা নিউটনীয় ফ্লুইডগুলির মতো কাজ করে না। উদাহরণস্বরূপ, এই অনন্য ফ্লুইডগুলি মৃদু চাপে আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে তবে আরও তীব্র বলের অধীনে প্রায় কঠিন পদার্থের মতো আচরণ করতে পারে। আর জৈবিক দ্রবণগুলিও ব্যতিক্রম নয় যখন অনন্য বৈশিষ্ট্যের কথা আসে – যার মধ্যে একটি হল স্থিতিস্থাপক অস্থিরতা (Elastic Turbulence)। এই শব্দটি জলীয় ফ্লুইডে অল্প ঘনত্বের পলিমার যোগ করার ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল ফ্লুইড গতিকে বর্ণনা করে। এই ধরণের অস্থিরতা কেবল অ-নিউটনীয় ফ্লুইডগুলিতেই বিদ্যমান।
এর বিপরীত হল ধ্রুপদী অস্থিরতা (Classical Turbulence), যা নিউটনীয় ফ্লুইড পদার্থে ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, নদীতে যখন সেতুর স্তম্ভের পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে জল প্রবাহিত হয়। ধ্রুপদী অস্থিরতা বর্ণনা এবং ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য গাণিতিক তত্ত্ব আছে । অন্যদিকে ইলাস্টিক অস্থিরতা জৈবিক নমুনা এবং শিল্প প্রয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনও এর জন্য প্রয়োজনীয় গাণিতিক সরঞ্জাম তৈরি হয়নি। কমপ্লেক্স ফ্লুইড প্রবাহ ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মার্কো এডোয়ার্দো রোস্টি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, “এই ঘটনাটি মাইক্রোফ্লুইডিক্সে গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ ছোট আয়তনের পলিমারিক দ্রবণ মেশানো কঠিন হতে পারে। এগুলি খুব মসৃণ প্রবাহের কারণে ভালভাবে মিশে যায় না ।“
এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ইলাস্টিক টার্বুলেন্সকে ধ্রুপদী টার্বুলেন্স থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বলে মনে করেছেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশনসে ল্যাবের সাম্প্রতিক প্রকাশনা এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। OIST-এর গবেষকরা ভারতের TIFR এবং সুইডেনের NORDITA-এর বিজ্ঞানীদের সাথে যৌথভাবে কাজ করে প্রকাশ করেছেন যে ইলাস্টিক টার্বুলেন্সের সাথে ধ্রুপদী নিউটনীয় টার্বুলেন্সের মিল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।
আমাদের ফলাফল থেকে দেখা যায় যে স্থিতিস্থাপক অস্থিরতার একটি সার্বজনীন শক্তি-সূত্র হল শক্তির ক্ষয় । এই ফলাফলগুলি আমাদের স্থিতিস্থাপক অস্থিরতার সমস্যাটিকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ করে দেয়। একটি প্রবাহ বর্ণনা করার সময়, বিজ্ঞানীরা প্রায়শই একটি বেগ ক্ষেত্র ব্যবহার করেন । গবেষণা পত্রের প্রথম লেখক ডঃ রাহুল কে. সিং বলেন, “প্রবাহ সম্পর্কে পরিসংখ্যানগত ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য আমরা বেগের ওঠানামার বন্টন দেখতে পারি।”
ধ্রুপদী নিউটনীয় অস্থিরতা অধ্যয়ন করার সময়, গবেষকরা সমগ্র প্রবাহের উপর বেগ পরিমাপ করেন এবং দুটি বিন্দুর মধ্যে পার্থক্য ব্যবহার করে একটি বেগ পার্থক্য ক্ষেত্র তৈরি করেন। ডঃ সিং ব্যাখ্যা করে বলেন, “এখানে আমরা তিনটি বিন্দুতে বেগ পরিমাপ করি এবং দ্বিতীয় স্তরের পার্থক্য(secondary difference) গণনা করি। প্রথমত, দুটি ভিন্ন বিন্দুতে পরিমাপ করা ফ্লুইডের বেগ বিয়োগ করে একটি পার্থক্য গণনা করা হয়। তারপরে আমরা আবারও এই জাতীয় দুটি প্রাথমিক স্তরের পার্থক্য (primary difference) বিয়োগ করি, যা আমাদের দ্বিতীয় পার্থক্য দেয়।”
এই ধরণের গবেষণার সাথে আরও একটি চ্যালেঞ্জ এসেছিল। এই জটিল সিমুলেশনগুলি চালানোর জন্য উন্নত সুপার কম্পিউটারের প্রয়োজন । অধ্যাপক রোস্টি বলেন, “আমাদের সিমুলেশনগুলি কখনও কখনও চার মাস ধরে চলে এবং প্রচুর পরিমাণে ডেটা আউটপুট করে” । এই অতিরিক্ত বিশদ বিবরণের ফলে একটি আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হয়েছে – যে ইলাস্টিক টার্বুলেন্সে বেগ ক্ষেত্রটি বিরতি যুক্ত (intermittent ) থাকে। প্রবাহের মধ্যে বিরতি কেমন দেখায় তা বোঝাতে, ডঃ সিং ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG) উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাদের আবিষ্কারগুলি নিম্ন-বেগের অস্থিরতার পিছনের পদার্থবৈজ্ঞানিক নীতিগুলিকে আরও ভালভাবে বোঝার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ তো বটেই, উপরন্তু স্থিতিস্থাপক অস্থিরতার বর্ণনা দিয়ে একটি সম্পূর্ণ গাণিতিক তত্ত্ব বিকাশের ভিত্তিও স্থাপন করে।