উষ্ণতা বৃদ্ধি ও কলা চাষের ভবিষ্যৎ

উষ্ণতা বৃদ্ধি ও কলা চাষের ভবিষ্যৎ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ মার্চ, ২০২৫

পৃথিবীজোড়া জনপ্রিয় ফলগুলির মধ্যে কলা প্রথম সারিতে। পুষ্টি ও খাদ্যগুণে ভরপুর কলা আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকে। কিন্তু এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যান বেবার-এর নেতৃত্বে পরিচালিত নতুন গবেষণা বলছে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি, কলা উপভোগের এই সাধারণ আনন্দ পাওয়াকে কঠিন করে তুলতে পারে। আসলে, কিছু দেশের আয়ের একটি প্রধান উৎস কলা রপ্তানি। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানের বড় অংশ জুড়ে, দেশগুলি কলা রপ্তানি করে বছরে ১১ বিলিয়ন ডলার টাকা উপার্জন করে। কিন্তু ২০৮০ সালের মধ্যে এই উৎপাদন তথা রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন, বাড়তি তাপমাত্রা থেকে শুরু করে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত- এসবের জন্য কিছু কৃষক ইতিমধ্যেই উৎপাদনে সমস্যা লক্ষ্য করছেন। বর্তমান উৎপাদন অঞ্চলের প্রায় ষাট শতাংশই হুমকির মুখে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, এই অঞ্চলগুলি অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে। উৎপাদকরা একাধিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই পরিবর্তনগুলি বিশ্ব বাজারে একটি বিশৃংখলার সৃষ্টি করতে পারে। যে সব মানুষ পুষ্টি এবং আয় উভয়ের জন্যই কলার উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। তাপমাত্রার পরিবর্তন কীটপতঙ্গদের বৃদ্ধি ঘটাবে, ফলে চাষিদের উপর বাড়তি চাপ আসবে। কলা চাষি পরিবারগুলি জীবিকা নির্বাহের নতুন উপায় খোঁজার জন্য বাধ্য হবে। এমনকি তাদের ভিন্ন এলাকায় স্থানান্তরিতও হতে হবে। কলা রপ্তানি ব্যবস্থায় যেকোনো বিঘ্ন সরবরাহের সময় এবং খরচ বাড়াতে পারে। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন, এই ফলের সরবরাহ শৃঙ্খল সবসময় সামান্য মুনাফার উপর ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে। জলবায়ু-সম্পর্কিত ব্যাঘাত, বাজারে একাধিক লোকসানের তরঙ্গ তুলতে পারে। নতুন প্রযুক্তির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা প্রায়ই প্রথমে বড় প্রতিষ্ঠানগুলিতে যায়। ছোট খামারগুলির কাছে আবহাওয়া কিংবা বাজারের পরিবর্তন মোকাবেলা করার তেমন সংস্থান কিন্তু নেই বললেই চলে।বর্ধিত তাপমাত্রা কলা উৎপাদন হ্রাসের মূল কারণ। তীব্র তাপ পরাগায়নে ব্যাঘাত ঘটায়। কলা বৃদ্ধিতেও এটি এক অন্তরায়। কিছু কৃষক সেচের ব্যবস্থা করেন, কিন্তু তা অতিরিক্ত খরচ বাড়ায়। গড় তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে, কিছু এলাকা সম্পূর্ণরূপে কলা উৎপাদনের অনুপযুক্ত হয়ে উঠবে। কিছু উৎপাদক গাছগুলিকে প্রখর সূর্যালোকে ঝলসে যাবার হাত থেকে বাঁচাতে ছায়া-জাত ব্যবস্থার খোঁজ করছেন। কিন্তু এসকল পদ্ধতি বড় আকারের উৎপাদনে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে।

এ তো কেবল নতুন কৃষিজমি খোঁজার বিষয় নয়। তাহলে সমাধান কি? অনেক বাগানই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত যেখানে শ্রমিক পাওয়া যায়। কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কার্যক্রম স্থানান্তর করা যুক্তিসঙ্গত মনে হলেও শিপিং রুট অর্থাৎ সেইমতো নতুন রাস্তা এবং বন্দরের সুবিধা তৈরি করা সহজ নয়।সীমিত অর্থায়নে ছোট উৎপাদকদের তাল মিলিয়ে চলতে সংগ্রাম করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সাহায্য করতে পারে। যেমন, তাপ-সহনশীল কলা প্রজনন করা। লক্ষ্য, উষ্ণতর জলবায়ুতেও ফলন স্থিতিশীল রাখা।
সেচ ব্যবস্থা শুষ্কতা প্রশমনে সাহায্য করে। কিছু অঞ্চল ফোঁটা সেচ এবং জল সাশ্রয়ী প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকেছে। তবে এর জন্যও প্রায়ই মোটা অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা রোগ প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের উপরেও গুরুত্ব দেন। উষ্ণতার দোলাচল বা জলের অভাবে ফলের উপর নতুন রোগজীবাণু আঘাত হানতে পারে।একটি পদ্ধতি হল তাপ-সহনশীল কলা প্রজনন করা। বেশ কিছু গবেষণাদল টেকসই কলা কৃষির ছোট প্রকল্প পরীক্ষা করতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে অংশীদারিত্ব ভাগ করে নিয়েছে। ফলাফলগুলি থেকে প্রায়শই দেখা যায় যে আগাম পরিকল্পনা বড় বিঘ্ন প্রতিরোধ করতে পারে। কৃষিজমি সংরক্ষণের পাশাপাশি কিছু চাষি যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির বিকল্পের কথা ভাবছে। ক্ষুদ্রঋণের মতো বিকল্প অর্থায়ন, এক্ষেত্রে কৃষকদের সাহায্য করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + thirteen =