
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় গবেষকরা একশিংযুক্ত সুন্দাইক ও ভারতীয় গণ্ডারের চেহারা ও আচরণগত পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন। আগে মনে করা হতো এরা একই ধরনের গণ্ডার। কিন্তু নতুন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে সুন্দাইক
গণ্ডার আসলে ভিন্ন একটি প্রজাতি। তাই বিজ্ঞানীরা এর নতুন নাম প্রস্তাব করেছেন
ইউরিনোসেরোস সোনডাইকাস।
প্রাণীবিজ্ঞানী ফ্রান্সেসকো নারদেল্লি ও জীবাশ্মবিদ কুর্ট হেইসিগের নেতৃত্বে চালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যে লাখো বছর ধরে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে ভারতীয় গণ্ডার (রাইনোসেরাস ইউনিকর্নিস)ও সুন্দাইক গণ্ডার (রাইনোসেরাস সোনডাইকাস) ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে। বিপন্ন প্রাণী এই সুন্দাইক
গণ্ডারের মাথার খুলি সরু, পেছনের অংশ চওড়া, প্রশস্ত নাক ও পাতা চিবোনোর উপযোগী ছোটো দাঁত রয়েছে। অন্যদিকে, ভারতীয় গণ্ডারের খুলির গঠন তুলনামূলকভাবে মজবুত, এদের ঘাস চিবিয়ে খাওয়ার জন্য লম্বা দাঁত রয়েছে।
বড় স্থলচর প্রাণীরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে বিভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকতে পারে । এই কারণে তাদের দাঁত ও মাথার গঠনেও পার্থক্য দেখা যায়। এই গবেষণাটি জুকিস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গণ্ডারদের ক্ষেত্রে, এই অভিযোজন তাদের দাঁতের গঠন ও মাথার অবস্থানের মধ্যে দেখা যায়।সুন্দাইক গণ্ডার অর্থাৎ ইউরিনোসেরোস সোনডাইকাস বর্তমানে শুধুমাত্র জাভার উজুং কুলোন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এরা প্রধানত গাছের পাতা ও ডালপালা খেয়ে বেঁচে থাকে। এই গণ্ডারের ত্বকে বিশেষ ধরণের বহুভুজ নকশা দেখা যায়, যা অন্য কোনো গণ্ডারে দেখা যায় না। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এই প্রজাতির স্ত্রী গণ্ডারের শিং থাকে না। অন্য কোনো গণ্ডার প্রজাতির ক্ষেত্রে এমন দেখা যায় না।
অন্যদিকে,ভারতীয় গণ্ডার নদীতীরের তৃণভূমিতে ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকে। এদের মূলত উত্তর ভারত ও নেপাল অঞ্চলে পাওয়া যায়।ভারতীয় গণ্ডার দেখতে বড় ও শক্তিশালী, ও এর ত্বকে গভীর ভাঁজ থাকে। এগুলি সুন্দাইক
গণ্ডারের চেয়ে অনেক বড়। মূলত হাতি ও সাদা গণ্ডারের পর এটিই সবচেয়ে বড় গণ্ডার। পুরুষ গণ্ডারের ওজন প্রায় ২,০০০ কেজির বেশি। আর স্ত্রী গণ্ডারের ওজন প্রায় ১,৬০০ কেজি পর্যন্ত হয়। জীবাশ্ম থেকে জানা যায় এই পার্থক্যগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ধাপে ধাপে তৈরি হয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, এটি শুধু শারীরিক পার্থক্য নয়, বরং দুই প্রজাতির জীবনধারার গভীর পার্থক্যকেও তুলে ধরে।
এই দুই গণ্ডারের আচরণও আলাদা। সুন্দাইক গণ্ডাররা সাধারণত একলা ঘুরে বেড়ায়, আর ভারতীয় গণ্ডাররা মাঝে মাঝে ছোট ছোট দল বাঁধে। গবেষকরা মনে করেন এই দুই প্রজাতির গণ্ডার নিজ নিজ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য আলাদাভাবে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তাই তাদের ভালোভাবে বুঝতে পারলে তাদের সংরক্ষণ ও রক্ষা করাও সহজ হবে।গবেষকরা বলেন, এই গবেষণার ভিত্তিতে সুন্দাইক গণ্ডারের ক্ষেত্রে আরও নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক নাম ‘ইউরিনোসেরোস সোনডাইকাস’
ব্যবহার করা উচিত।তারা ব্যাখ্যা করেন, এই নতুন নাম সুন্দাইক গণ্ডারের ইতিহাস ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে ভালোভাবে প্রকাশ করে।এটি শুধু গণ্ডারের বিবর্তন বুঝতে সাহায্য করবে না, বরং তাদের রক্ষার জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা করতেও সাহায্য করবে।
নামে বোধহয় ভুল আছে