![](https://bigyanbhash.org/wp-content/uploads/2021/08/WhatsApp-Image-2021-08-19-at-15.39.34-1-1024x577.jpeg)
নিউক্লিয়ার ফিউশন। বাংলায় নিউক্লিয় সংযোজন। যে বিক্রিয়ায় মেলে প্রচুর শক্তি। সূর্যের বুকে তৈরি হওয়া বিপুল শক্তির উৎস এই নিউক্লিয় সংযোজনই। বিরাট মাপের সব নিউক্লিয় রিয়্যাকটর থেকেও বিজ্ঞানীরা তৈরি করার চেষ্টা করেন বিপুল শক্তি, যা কাজে লাগানো যেতে পারে বিদ্যুৎশক্তি হিসেবে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় ন্যাশনাল ইগনিশন ফেসিলিটি এরকমই এক কেন্দ্র, যেখানে এই মাসেরই আট তারিখে বিজ্ঞানীরা খুব অল্প সময়ে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন করতে পেরেছেন এক বিশেষ ধরনের নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া ঘটিয়ে।
নিউক্লিয় সংযোজনের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করা নানা কারণেই বিজ্ঞানীদের আগ্রহের জায়গা। এতে যেমন পরিবেশ দূষণকারী গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হয় না, তেমনই দীর্ঘস্থায়ী তেজস্ক্রিয় বর্জ্যও পাওয়া যায় না এই ধরনের বিক্রিয়ার শেষে। এই ধরনের বিক্রিয়ায় দুটো হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস একত্রে যুক্ত হয়ে একটা হিলিয়ামের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়, যার সঙ্গে উৎপন্ন হয় বেশ কিছুটা শক্তি। তবে এই ধরনের বিক্রিয়া ঘটাতে এলে দরকার হয় প্রচণ্ড বেশি উষ্ণতা আর উচ্চচাপের, যা অনেকসময়েই নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
এজন্যই বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন কীভাবে কতটা সহজে নিউক্লিয় সংযোজন ঘটানো যায়।
ক্যালিফোর্নিয়ার ওই নিউক্লিয় চুল্লীতে বিজ্ঞানীরা ১২২টি লেজার রশ্মিকে একত্রিত করে ফেলা হয় একটা ছোট্ট সিলিন্ডারের মধ্যে। সেখানে রাখা রয়েছে একটা বাদামের আকারের জ্বালানি ক্যাপসুল। লেজার আলোর দাপটে ওই সিলিন্ডার যখন বিস্ফোরিত হয়, তখন তা থেকে বেরিয়ে আসে শক্তিশালী এক্স রশ্মি। ক্যাপসুলটির উপাদান ডয়টেরিয়াম আর ট্রিটিয়াম, যা আসলে হাইড্রোজেনের দুটি আইসোটোপ (সাধারণ হাইড্রোজেনের সঙ্গে এই দুই পরমাণুর পার্থক্য হল, এদের নিউক্লিয়াসে রয়েছে যথাক্রমে একটি ও দুটি নিউট্রন, সাধারণ হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসে একটাও নিউট্রন থাকে না, থাকে শুধু একটা প্রোটন)। ওই শক্তিশালী এক্স রশ্মির প্রভাবে এই পরমাণুদুটির নিউক্লিয়াস সংযোজন প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছে যায় প্রায়। আর দুটো নিউক্লিয়াস একবার যুক্ত হয়ে হিলিয়ামের নিউক্লিয়াসে পরিণত হলে সে আবার পাশাপাশি অন্য নিউক্লিয়াসদেরকেও যুক্ত হতে সাহায্য করে (এই পদ্ধতির নাম আলফা হিটিং)। পুরো প্রক্রিয়াটা এইভাবে একটা চেইন বা শৃঙ্খলের মতো দ্রুত চলতে শুরু করে, ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বহু সংখ্যক নিউক্লিয়াস সংযোজিত হয়ে শক্তি নির্গমন শুরু করে দেয়। এবারের এই পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা এই আলফা হিটিং ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি হারে করে উঠতে সক্ষম হয়েছেন।
ঠিক কত শক্তি উৎপন্ন হয়েছে এবার? ওঁরা জানাচ্ছেন, সে পরিমাণ ১৩ লক্ষ জুল, যেখানে এঁর আগেরবার তাঁরা পেরেছিলেন ১.৭ লক্ষ জুল শক্তি। এতটা সাফল্য, তাঁরাও আশা করেননি। আর এইভাবে চললে তাঁরা নিশ্চিত, খুবই শিগগিরি নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া স্থায়ীভাবে শক্তি উৎপাদনের একটা দারুণ উপায় হিসেবে গণ্য হতে শুরু করবে। জ্বালানি শক্তির একটা ভালো উৎস হিসেবে একে ব্যবহার করাও সহজ হবে।