কয়লার নির্বাসন প্রায় অসম্ভব

কয়লার নির্বাসন প্রায় অসম্ভব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ নভেম্বর, ২০২১

ভারতের একদম দক্ষিণে যান। সমুদ্রের উপকূলে। প্রত্যেক দিন দেখা যায় দৃশ্যটা। বিশাল দৈর্ঘ্যের এক কনভেয়ার বেল্ট। সেই বেল্টে চেপে সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী জাহাজ থেকে কয়লা আসছে। লক্ষ লক্ষ টন কয়লা। আগামী ৩০ বছর ধরে এই কয়লা জলবে! কাদের জন্য?দক্ষিণের যে রাজ্যে প্রায় ৭ কোটি মানুষ থাকেন তাদের বিভিন্নরকমের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য। তামিলনাড়ুর উড়ানগুডিতে তৈরি হচ্ছে বিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর মধ্যে উড়ানগুডি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এশিয়ায় ২০০ নম্বর। এই তালিকায় ভারতে রয়েছে আরও ২৮টি নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চিনে ৯৫টি এবং ইন্দোনেশিয়ার ২৩টি প্রোজেক্ট।
কাল রবিবার থেকে গ্লাসগোয় শুরু হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন কমানোর সম্মেলন। সেখানে কয়লাকে নির্বাসন দেওয়ার প্রস্তাব ওঠার কথা। কিন্তু বাস্তবের ছবি যে অন্যরকম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল এনার্জি মনিটর নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে এশিয়ায় মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ নিভরর্শীল কয়লার ওপর! এবং এই চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। ইউরোপের ছবিটা এরকম নয়। মার্কিন মুলুকে ২০০০-এর পর থেকে ৩০১টি কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইউরোপের বহু দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কয়লার ব্যবহার প্রায় বন্ধ।
পৃথিবী জুড়ে এই মুহুর্তে কয়লা চালিত নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯৫টি। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ এশিয়ায়! তামিলনাড়ুকে বলা হয় ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল অধ্যষিত রাজ্য এবং দেশের সেরা নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদক (রিনিউএবল এনার্জি) রাজ্য। তাও সেই রাজ্যে তৈরি হচ্ছে বিশাল কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরিসংখ্যান আরও জানিয়েছে, ভারতে এই মুহুর্তে কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলছে ২৮১টি।
কিন্তু চিনের অবস্থা তো আরও খারাপ। দেশে সক্রিয় ১০০০টি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র! সরকারের পরিকল্পনায় আরও ২৪০টি কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা! তাতেও আশা পূরণ হচ্ছে না! এই মুহুর্তে চিনে চলছে এনার্জি প্রোডাকশনের বিশাল সমস্যা। একদিকে তারা বলছে আমরাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রিনিউএবল এনার্জি প্রোডিউসার! আর অন্যদিকে দেশের কয়লা খনির মালিকদের সরকারের কড়া নির্দেশ, কয়লার যোগান বাড়াও! সম্প্রতি উষ্ণায়ন নিয়ে বিশ্বজুড়ে সোরগোল ওঠার পর চিন বলছে ২০২৬ থেকে তারা নাকি কয়লার ব্যবহার কমিয়ে দেবে!
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প কয়লা। পৃথিবীর বাতাসে তাদের গত পাঁচ বছরে অবদান ১৭০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ! চিন, ভারতের পাশাপাশি জাপানও যেভাবে কয়লার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে তাতে আগামীদিনে কয়লার নির্বাসনের কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
গ্লাসগোয় কয়লা ব্যবহার কমানো নিয়ে কী আলোচনা হবে কে জানে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + 12 =