ক্লাইমেট সামিট: থুনবার্গের বিদ্রুপ

ক্লাইমেট সামিট: থুনবার্গের বিদ্রুপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ অক্টোবর, ২০২১

৩১ অক্টোবর গ্লাসগোয় শুরু হচ্ছে ক্লাইমেট সামিট। বহু প্রতীক্ষিত এক সম্মেলন। বিশ্ব উষ্ণায়ন কমানোর অঙ্গীকার নিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত হচ্ছেন পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশের রাষ্ট্রনেতারা। ২০১৫-র প্যারিসে হওয়া ক্লাইমেট সামিটের আবহাওয়া পরিবর্তনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার এত বড় প্রয়াস বিশ্ব রাজনীতিতে হয়নি।
কিন্তু গ্রেটা থুনবার্গ একদমই নিশ্চিত নন। ১৮ বছরের এই সুইডিশ দস্যি ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্ট মেয়ের মুখে বরং সাফ কথা, “আমি গ্লাসগোয় গিয়ে শুনতে চাই, প্রত্যেকটি দেশের রাষ্ট্রনেতাদের স্বীকারোক্তি যে, ২০১৫-র প্যারিসের ক্লাইমেট সামিটের পর থেকে এখনও পর্যন্ত তারা উষ্ণায়ন কমাতে কোনও পদক্ষেপই নেননি!”
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরষ্কার (২০১৯-এ পাওয়া) সহ পরিবেশ নিয়ে কাজ করা গ্রেটার ঝুলিতে একাধিক পুরষ্কার ঢুকে পড়েছে। গ্রেটা থুনবার্গ এখন আন্তর্জাতিক চরিত্র। স্পষ্টবাদী হওয়ার জন্য। কী ঘরে, কী বাইরে, কী রাজনীতিবিদদের সামনে, গ্রেটা আপোষহীন! এ মেয়ে থামবার নয়! স্টকহোমে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। নাম ফ্রাইডে ফর ফিউচার মুভমেন্ট। প্রত্যেক শুক্রবার স্কুল কামাই করে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে অজস্র সঙ্গীকে নিয়ে সুইডেনের পার্লামেন্টের সামনে প্রতিবাদ করে যাওয়া যার অন্যতম কাজ! গত তিন বছর ধরে নাগাড়ে চলছে এই কাজ। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে বোঝানোর কাজও চলে যে, কীভাবে গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আবহাওয়া, কীভাবে শিল্পাঞ্চল জুড়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমনে দূষিত হচ্ছে বাতাস আর পৃথিবীর তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি। বাবা-মা-র ঘর ছেড়ে নিজে আলাদা ঘর ভাড়া করেছেন গ্রেটা। সেখানে তার সঙ্গী একটা ল্যাব্রাডর, রক্সি আর একটা গোল্ডেন রিট্রিভার, মোজেস। বাবা-মা নিয়মিত যাতায়াত করেন গ্রেটার ঘরে।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রেটা বলেছেন, “গ্লাসগোয় আমি যাব। কিন্তু জানি হতাশ হয়ে ফিরতে হবে! দারুণ দারুণ ভাষণ শুনব। কিন্তু সামিট শেষ হয়ে যাওয়ার পরের পাঁচ বছরেও কোনও সরকারকে উষ্ণায়ন কমানোর জন্য কোনওরকম উদ্যোগ নিতে দেখব না! প্যারিসের পুনরাবৃত্তি হবে গ্লাসগোয়। অথচ, পৃথিবীর তাপমাত্রা কিন্তু ১.৫ ডিগ্রি ইতিমধ্যে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখনও রাষ্ট্রনেতারা বুঝতে চাইছেন না অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ওপর কী ভয়ঙ্কর বিপদ আস্তে চলেছে। আমি চাই রাষ্ট্রনেতারা অন্তত সত্যি কথাটা বলুক যে তারা প্যারিস সামিটে একইরকমের অঙ্গীকার নিয়েও গত সাত বছরে কিছু করেননি!
বিশ্বের রাষ্ট্রনেতাদের উদাসীনতার যে তীব্র সমালোচনা, সেটা থুনবার্গ কিন্তু শুধু রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে করেননি, ২০১৯-এ সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলনে উপস্থিত থাকা রাষ্ট্রনেতাদের সামনেও করেছিলেন। এই জন্যই তিনি গ্রেটা থুনবার্গ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − three =