গালাপাগোসে হারানো পাখির প্রত্যাবর্তন

গালাপাগোসে হারানো পাখির প্রত্যাবর্তন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ মার্চ, ২০২৫

চার্লস ডারউইন প্রথম ‘গ্যালাপাগোস রেইল’ নামক একটি পাখির বর্ণনা দিয়েছিলেন। সালটা ছিল ১৮৩৫। সেই সময় তিনি ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের’ উপর কাজ করছিলেন। এরপর থেকে ফ্লোরিয়ানা দ্বীপে এই পাখিটিকে আর দেখা যায়নি। তবে, সম্প্রতি ফ্লোরিয়ানায় পাখি পর্যবেক্ষণকারীরা তিনটি আলাদা আলাদা স্থানে রেইল পাখি দেখেছেন। প্রায় ১৯০ বছর পর! গ্যালাপাগোস রেইল একটি ছোট, কালো রঙের পাখি যা ভূমিতে থাকে। উড়তে পারে না বলে এরা সহজেই শিকারীর কবলে পড়ে। সেই সময় ইঁদুর ও বিড়ালের মতো কিছু প্রজাতির সংখ্যা বাড়ছিল। স্বভাবতই এরা পাখির ডিম এবং উড়তে অক্ষম আস্ত পাখি ধরে খেতো। “সম্ভবত কিছু ইদুর প্রভৃতি প্রজাতি দ্বীপে বসতিকারী জলদস্যু জাতীয় লোকের সাথে এসেছিল।” বলেছেন দ্বীপ সংরক্ষণের স্থানীয় প্রজাতি ব্যাবস্থাপক পাউলা কাস্তানো। “সম্ভবত সেই সময়ই ডারউইনও ফ্লরিয়ানা দ্বীপে আসেন”। ফ্লোরিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে বেশ কিছু পাখি এবং বিরাট কচ্ছপ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে। আদি স্থানীয় প্রাণীরা যাতে ফিরে আসতে পারে তার জন্য পরিস্থিতি উন্নত করতে, আইল্যান্ড কনজারভেশন এবং চার্লস ডারউইন ফাউন্ডেশন সহ একটি দল, বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করে ইঁদুর নির্মূল করার একটি প্রকল্প শুরু করে। কিন্তু কাস্তানো বলেছেন, বিপন্ন কিছু দেশীয় প্রজাতিও , বিশেষত শিকারি পাখি, এই বিষের সংস্পর্শে আসতে পারে। তাই সেই প্রজাতিগুলিকে রক্ষা করতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। কিভাবে? উদাহরণস্বরূপ, “গ্যালাপাগোস ছোটো কান ওয়ালা পেঁচার (Asio flammeus galapagoensis) বিপন্নতা কমাতে, এদের একটি দলকে বন্দী অবস্থায় আনা হয়। দ্বীপটি সেই প্রজাতিটির ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হলে পর, তখন আমরা আবার ওদের সেই দলটিকে মুক্ত করব,” কাস্তানো বলেছেন। অপরদিকে, স্থানীয় মানুষজন যাতে পোষা বিড়ালদের ঘরের ভিতরে রাখেন, তা নিয়েও তাঁরা প্রচার চালিয়েছেন। প্রাকৃতিক কারণ বাদ দিলে, পৃথিবীতে গৃহপালিত বিড়ালরা হল সবচেয়ে বড়ো পাখি হত্যাকারী। দ্বীপের বাসিন্দারা এই কর্মসূচিকে সমর্থন করেছেন। দ্বীপের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা ক্লডিও ক্রুজ জানান,”আমি সত্যিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম যখন জানানো হল যে রেইল পাখি দেখা গেছে। আশা করি, অন্যান্য যেসব পাখি একসময় হারিয়ে গেছে বলে আমরা মনে করতাম, তারাও আবার দেখা দিতে শুরু করবে”। প্রকল্প সমন্বয়কারীরা ১২টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানীয় প্রজাতিকে সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, যাতে ইঁদুর এবং বিড়াল উভয়কেই মোটের ওপর অপসারণ করার পর তারা দ্বীপে ফিরে আসতে পারে !
সম্ভবত গালাপাগোস দ্বীপে অল্প কিছু রেইল সবসময়ই ফ্লোরিয়ানাতে উপস্থিত ছিল। কিন্তু আক্রমণকারীদের সংখ্যা কমার আগে অব্দি রেইল জনসংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়নি। বিকল্প ধারণাটি হল, তারা হয়তো অন্য দ্বীপ থেকে এখন ফ্লোরিয়ানা দ্বীপে এসেছে। “ওরা ভালো সাঁতারু কিন্তু ভালো উড়তে পারে না। তাই দ্বিতীয়টা যদি সত্যি হয়, তাহলে এ তো একটা চমকপ্রদ ব্যাপার “, কাস্তানো বলেন। আসলে, প্রকৃতি আমাদের সবসময়ই চমকে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =