দূষিত জল ছাড়া হবে শুনে আতঙ্কে জাপানের চাষীরা

দূষিত জল ছাড়া হবে শুনে আতঙ্কে জাপানের চাষীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ নভেম্বর, ২০২১

জাপানের উত্তর-পশ্চিমে ফুকুশিমায় পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে দূষিত জল ছাড়া হবে ২০২৩-এ। বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে ফুকুশিমাকে দূষণমুক্ত করাই সরকারের উদ্দেশ্য। কিন্তু এই ঘোষণায় আতঙ্কে ফুকুশিমার চাষীরা। তাদের মনে হচ্ছে, এই দূষণে চাষের সমস্ত ফসল, শষ্য দূষিত হয়ে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে এবং জোগানের অভাব থেকে সৃষ্টি হবে আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি! পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনতে যে দেশের সময় লেগেছিল এক দশকেরও বেশি সময়! দূষিত জল ছাড়ার ঘোষণায় উদ্বিগ্ন শুধু দেশের চাষীরা নন, প্রতিবেশী চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়াও। দেশের চাষীদের সংগঠনের কর্ণধাররা ইতিমধ্যে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন, ক্ষতির ধাক্কা কীভাবে সামলানো হবে। ২০১১-র ভূমিকম্প এবং সুনামির বিধ্বংসী প্রভাবের পর প্রথমবার, গতবছর ফুকুশিমায় ফল ও শষ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছিল। ন্যাসপাতি বিক্রি হয়েছিল কিলো প্রতি ৫০৬ ইয়েনে (৪.৪৩ মার্কিন ডলার)। উৎপাদন কমে যাওয়াই এর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন ওখানকার কৃষকরা। ফুকুশিমার কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের এক আধিকারিক কাজুহিরো ওকাজাকি জানিয়েছেন ২০১১ থেকেই ওখানকার বাতাসে নানারকমের তেজষ্ক্রিয় উপাদানের মিশতে থাকা। তারপরও গতবছর ফুকুশিমা উৎপন্ন করেছিল ১৩ হাজার টন ন্যাসপাতি, দেশের সর্বোচ্চ ন্যাসপাতি উৎপাদক শহরগুলির মধ্যে চার নম্বর স্থানে জায়গা হয়েছিল ফুকুশিমার।
এই তেজষ্ক্রিয়তার শক্তি বেড়ে যাবে পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে দূষিত জল ছাড়ার পর। টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি হোল্ডিংস প্ল্যান্ট পরিষ্কারের কাজটা করবে। এক হাজারটা জলের ট্যাঙ্ক। এক একটা ১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সেখানে জল ধরার পরিমাণ ৫০০টি সুইমিং পুলে জল ধরার সমান! অলিম্পক্সে যে সুইমিং পুলগুলো আমরা দেখি সেরকম এক একটা জলের ট্যাঙ্ক।
কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে তেজষ্ক্রিয়তার দূষণ জল ছাড়ার সময় বার করে দেওয়া হবে। কিন্তু ট্রিটিয়ামকে বার করা যাবে না। ট্রিটিয়ামেও সৃষ্টি হয় প্রবল দূষণের। চাষীদের বক্তব্য, বহুবছর ধরে জলের ট্যাঙ্কগুলোতে জল রয়েছে। তাই জল এমনিতেই দূষিত হয়ে রয়েছে। সুতরাং জল ছাড়ার পর শষ্যের ক্ষেত সেই তেজষ্ক্রিয়তায় প্রবলভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চাষীদের উদ্বেগ, জাপানে ক্রেতারা প্রত্যেকটা জিনিসে, বিশেষত ফল ও সবজি কেনার সময় দামের চেয়েও বেশি দেখেন, জিনিসটি সতেজ আছে কি না। চাষীরা আতঙ্কিত এই ভেবে যে, আবার সেই হিরোসিমা, নাগাসাকির পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরের সময়টা ফিরবে না তো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + 3 =