ধুমকেতুর তাপে আটাকামায় কাচের বিস্তীর্ণ অঞ্চল

ধুমকেতুর তাপে আটাকামায় কাচের বিস্তীর্ণ অঞ্চল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ নভেম্বর, ২০২১

চিলির আটাকামা মরুভূমিতে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে কালো ও নীল কাচের টুকরো। কীভাবে এই বিরাট এলাকা জুড়ে এত কাচের টুকরো এলো – এ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল বহুদিনের। এ বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা চলতি নভেম্বরের ২ তারিখে ‘জিওলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয় প্রায় ১২হাজার বছর আগে কোনো ধুমকেতু ছিটকে এসে বিস্ফোরণের ফলেই ঐ কাচের সৃষ্টি। গবেষণা দলের সদস্য ব্রোন ইউনিভার্সিটি র প্ল্যানেটারি জিওলজিস্ট পিটার স্কুলৎজ বলেন, এই কাচের টুকরোর বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রই পৃথিবীতে ধুমকেতু বা অন্য অ্যাস্টেরয়েড আঘাতের চিহ্ন। অ্যাস্টেরয়েড বা ঐ জাতীয় মহাজাগতিক পাথর পৃথিবী পৃষ্ঠে পড়ে বড় গর্ত তৈরি করেছে – এরকম ১৯০টি উদাহরণ আছে পৃথিবীতে। কিন্তু ধুমকেতু এর মধ্যে কোন গর্ত তৈরি করেছে বলে জানা ছিলো না। ধুমকেতু সাধারণত খানিক পাথর ও কঠিন বরফে গঠিত হয়। সেকারণে মাটিতে পৌঁছানোর আগেই বিস্ফারিত হয়ে যাওয়ার ঝোঁক থাকে। ধুমকেতুর এই জ্বলন্ত প্রক্রিয়ার নাম- এয়ারব্রাস্ট। এয়ারব্রাস্ট এ প্রচুর পরিমাণে তাপ ও উষ্ণ বাতাস তৈরি হয়। তবে সব সময় ধুমকেতু অ্যাস্টরয়েডের মতো পৃষ্ঠ ক্ষত তৈরি করতে পারে না।
মুশকিল হলো আটাকামার যে অঞ্চলে কাচের টুকরো ছিটিয়ে ছিল তার থেকে অনেক কিলোমিটার দূরে আগ্নেয়গিরি অবস্থিত এবং সেটিও মৃত শীতল আগ্নেয়গিরি। তাহলে এই কাচ তৈরির জন্যে বিপুল তাপ চাপ আসলো কোত্থেকে? স্কুলৎজরা ধারণা করেন অন্য কোনো ভাবে যেমন এয়ারব্রাস্ট ইত্যাদির ফলে কাচ তৈরি সম্ভব। এছাড়া আরো একটি রহস্য ছিল ঐ স্থানে। কাচের মাটির নিচে ঐ স্থানে যে মৃত গাছ, জীবাশ্ম ইত্যাদি পাওয়া যায় তার রেডিওকার্বন ডেট সবগুলির এক ছিল না। এ থেকে বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করেন একবার নয় দুবার এয়ারব্রাস্ট ঘটেছিল ঐ এলাকায়। কিছু কাচ পরীক্ষার পর স্কুলৎজ এবং তার দল দেখেন কাচ তৈরিতে প্রায় ১৭০০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা লেগেছিলো। নাসার স্টারডাস্ট মিশন ঐ কাচের মধ্যে ধুমকেতুর উপাদান চিহ্নিত করেন, যা কোনো ভাবেই অ্যাস্টেরয়েডে থাকা সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + fourteen =