
প্রায় এক শতকেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ এক প্রজাতির ব্যাঙের পুনরায় দেখা মিলেছে। চিলির ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল এই চমকপ্রদ আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন।এই গবেষণাটি জুকিস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।আলসোডেস ভিটাটাস প্রজাতির এই ব্যাঙ ১৯০২ সালে প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর ১৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা একে আর খুঁজে পাননি।অনেকবার খোঁজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। বিজ্ঞানীরা অবশেষে এই ব্যাঙকে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন।চিলির কনসেপসিওন বিশ্ববিদ্যালয়-এর সাইকো গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা ক্ষেত্র গবেষণা করে নিশ্চিত করেছেন যে এই বিরল ব্যাঙের অস্তিত্ব এখনো আছে।গবেষকরা চিলির লা আরাউকানিয়া অঞ্চলের হাচেন্দা সান ইগনাসিও দে পেমেহুতে এই হারিয়ে যাওয়া ব্যাঙকে আবার খুঁজে পেয়েছেন। এই বিরল ব্যাঙটিকে প্রথম চিহ্নিত করেছিলেন প্রকৃতিবিদ রোডুলফো আমান্ডো ফিলিপি। তবে এটিকে প্রথম খুঁজে পান ফরাসি বিজ্ঞানী ফিলিবার্ট জারমেইন ১৮৯৩ সালে। সে সময় তিনি তিনটি ব্যাঙ সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তীতে গবেষক ফিলিপি এই প্রজাতির পরিচয় নিশ্চিত করতে এগুলি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে এই ব্যাঙের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে গবেষকরা পেমেহু এলাকায় অনেক চেষ্টা করেও এটি খুঁজে পাননি।২০১৫ ও ২০১৬ সালে আবার অনুসন্ধান শুরু হয়, কিন্তু তখন যে ব্যাঙগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর দেহে সাদা বা হলুদ রঙের দাগ ছিল না, যা আলসোডেস ভিটাটাসের বিশেষ চিহ্ন। অবশেষে, দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি অনুসন্ধানের পর, নতুন একদল গবেষক ড. ক্লাউডিও কোরিয়া, প্রকৌশলী এডভিন রিভেরোস রিফো, এবং জীববিজ্ঞানী জুয়ান পাবলো দোনোসো এই ব্যাঙ খোঁজার জায়গা পরিবর্তন করেন। তাদের এই নতুন কৌশল সফলও হয়।লোলকো ও পোর্তালেস নদীর আশেপাশের এলাকায়, তারা দুটি ব্যাঙের দল খুঁজে পান। পরে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন এটিই সেই আলসোডেস ভিটাটাস! গবেষকরা নতুন এলাকায় আলসোডেস ইগ্নিয়াস ও আলসোডেস ভিটাটাস এই দুই প্রজাতির ব্যাঙ খুঁজে পেয়েছেন। তারা তুপুইউন্তুয়ি নদীর জলের নিচে আলসোডেস ভিটাটাস ব্যাঙ ও ব্যাঙাচি দেখতে পান। এই অপ্রত্যাশিত সাফল্য দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের ব্যাঙ সংরক্ষণে নতুন আশা জাগিয়েছে।গবেষকরা জানান, সঠিক অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য না থাকায় আলসোডেস ভিটাটাস খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়েছিল ।১৮৯৩ সালে যখন ফিলিবার্ট জারমেইন এই ব্যাঙ সংগ্রহ করেছিলেন, তখন হাচেন্দা সান ইগনাসিও দে পেমেহু ছিল বিশাল এলাকা। কিন্তু তিনি ঠিক কোথা থেকে ব্যাঙটি পেয়েছিলেন, তা উল্লেখ করেননি। তাই গবেষকদের কাছে এটি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছিল।গবেষকরা আগে হাচেন্দা সান ইগনাসিও দে পেমেহু-এর উত্তর-পশ্চিম অংশে অনেকবার খোঁজ চালিয়েছিলেন, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব দিক নিয়ে তেমন কোনো তথ্য ছিল না। তাই গবেষকরা পুরনো নথি ও লেখাগুলো দেখে সম্ভাব্য স্থান অনুমান করেন।এই তথ্যের ভিত্তিতে কোরিয়া ও রিভেরোস দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় অনুসন্ধান করেন। শেষমেষ ১০০ বছরের বেশি সময় পর, বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতির ব্যাঙের জীবনধারা ও পরিবেশ নিয়ে প্রথমবার তথ্য পেয়েছেন। অন্যান্য আলসোডেস প্রজাতির ব্যাঙের মতো এই ব্যাঙও সাধারণত ছোট নদী বা ঝর্ণার পাশে থাকে ।তবে, এই প্রজাতির ব্যাঙ খুব ছোট এলাকায় বাস করে এবং মানুষের কার্যকলাপে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।জমির ব্যবহার পরিবর্তন, গাছ কাটা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চিলির শীতল বনগুলি ব্যাঙেদের বসবাসের পক্ষে বিপদজনক হয়ে উঠেছে । সেকারণে এই এলাকার অনেক ব্যাঙ বিলুপ্তির পথে । গবেষকদের মতে, আলসোডেস ভিটাটাসকেও হয়তো বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রাখা হতে পারে।তবে, এই ব্যাঙের সংখ্যা, প্রজননস্থান, অভিযোজন প্রভৃতি জানার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন ।অনেক আলসোডেস ব্যাঙের প্রজাতি সম্পর্কে এখনো ভালোভাবে গবেষণা করা হয়নি। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন গবেষণা ও দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই ঘাটতিগুলো পূরণ করা দরকার।আলসোডেস ভিটাটাস ব্যাঙ আবার খুঁজে পাওয়ার খবর বিশ্বজুড়ে উভচর প্রাণী সংরক্ষণের জন্য নতুন আশা জাগিয়েছে। গবেষকরা জঙ্গলের সংরক্ষণ, মানুষের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো এবং প্রয়োজনে ব্যাঙের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রজনন কর্মসূচি চালু করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারেন।ব্যাঙ পুনরুদ্ধারের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে পৃথিবীর কোনায় কোনায় অনেক অজানা জীববৈচিত্র্য লুকিয়ে থাকতে পারে।